নাজিরপুরে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির মাছ

বেশিদিন আগের কথা নয়, পিরোজপুরের নাজিরপুরের বিলঞ্চলে সব সময় পাওয়া যেত দেশীয় প্রজাতির মাছ। কিন্তু কালের পরিবর্তনে এখন আর চিরচেনা সেই দেশিও মাছুগুলো দেখা যায় না। দেশি প্রজাতির ছোট-বড় অনেক মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় নদীনালা, খালবিল, পুকুর-ডোবা এবং ফসলি ক্ষেতে প্রচুর দেশিও প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। তখন গ্রামের কিছু সংখক নি¤œ আয়ের মানুষের পেশাই ছিল মাছ ধরা। তাই দেশিও মাছের সংকটে তারা পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছেন। বিলুপ্ত হওয়া মাছের মধ্যে রয়েছে- পাবদা,শিং, কৈ, তিন কাঁটা আইড়,টাকি, ভেদা, মাগুর, বড় শোল প্রভৃতি। বর্তমানে পুঁটি, চিংড়ি, তিতপুঁটি, টেংরা,চান্দা, বাইম, সর পুটিঁ, বাইলা, মাছও হাটবাজারে তেমন চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে পাওয়া গেলেও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে কৃষি জমিতে অতিমাত্রায় সারায়নিক সার ব্যবহারের ফলে দেশিও মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। দেশে দিন দিন জনসংখ্যার পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য সংকট থেকে রেহাই পেতে কৃষি জমিতে উন্নত ধানের উৎপাদনের কারণে বেশি পরিমানে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, আর এই রাসায়নিক সারই দেশিও মাছের কাল হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের বাস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে এতে করে বিভিন্ন ডোবা, নালা এমনকি খাও ও ভরাট করা হচ্ছে। দেশিও মাছের বাসস্থানই হলো বিভিন্ন ডোবা নালা, বিল,ঝিল ইত্যাদি। বর্ষার মৌসুমে মাঠে পানিতে যখন ছয়লাভ হয় তখন মাছে বংশবিস্তার করে কিন্তু কালের পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কষি জমিতে রাসায়ক ব্যবহারে মাছ আগের মত আর বংশ বিস্তার করতে পারে না মারা যায়। শুকনো মৌসুমে মাছ ডোবা, বিলে থাকত কিন্তু এখন সেই বিল সেচ করে ধান চাষ করা হয় তাতে মারা পরে যায় বীজ মাছ, ফলে ধীরে ধীরে কুমতে থাকে দেশিও প্রজাতীর মাছ। বর্তমানে গ্রাম গঞ্জের বাজারে কিছু সংখক দেখা মিললেও তার উচ্চ মূল্যের কারণে নি¤œ আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। আর এভাবে যদি চলতে থাকে তা হলে দেখা যাবে আর এক দশকের মধ্যেই দেশিও মাছ বলে কিছু আছে সেটা অনেকের চিনতে কষ্ট হবে। এছাড়া আমাদের দেশের মৎস্য আইন সম্পূর্ণ কার্যকর নাই। তাই আমাদের দেশিও প্রজাতির মাছ রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে, মৎস্য নিধন বন্ধ করা, জলাশয় ভরাট না করা, জলাশয়গুলোর পানি সেচ করে  বীজ মাছ মেরে না ফেলা, দেশি প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে জলাশয়ে অবমুক্ত করা জরুরী। একই সঙ্গে মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগও জরুরি। মনে রাখা দরকার, সুস্বাদু দেশি প্রজাতির মাছ আমাদের ঐতিহ্য। আমরা এই ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত হতে দিতে পারি না।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *