বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বাসিন্দা গার্মেন্টসকর্মী কবিতা সরকার (৪৫) মাসের পর মাস বিভিন্ন দ্বারে ঘুরে উপযুক্ত বিচার না পেয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন। সোমবার (০৭ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা সদরের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে তিনি এই অনশন শুরু করেন। তার দাবী, সুব্রত সরকারের কাছে পাওনাকৃত ২০ লাখ টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা সুব্রত সরকারের কাছে তিনি ওই টাকা পাবেন।

চিতলমারীর সাবোখালী গ্রামে তার বাড়ি। তিনি বলেন, ‘আমি কোথায় যাবো? কার কাছে বিচার পাবো? ২৬ বছর চাকুরীর টাকা জমিয়ে সুব্রত দিয়ে দিয়ে ফেঁসে গেছি। এখন সেই টাকা পাবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
কান্নাজড়িত কন্ঠে সোমবার সন্ধ্যায় কবিতা সরকার সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘চিতলমারীর ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) সাহেবের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে যে আমি সাবোখালী গ্রামের মৃত ভরত সরকারের ছেলে সুব্রত সরকারের কাছে ২০ লাখ টাকা পাবো। সুব্রত সরকার নিজে স্বীকারও করেছে তার কাছে আমার পাওনা টাকার কথা। কিন্তু আজো আমি আমার পাওনা টাকা কিংবা জমি পাইনি। সুব্রত সেই টাকার পরিবর্তে আমাকে জমি দলিল করে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই জমি না দিয়ে কৌশলে জমি বিক্রি করেছে এবং অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছে। আমার কাছে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ জায়গা-জমি যাতে সে অন্যত্র বিক্রি করতে না পারে এবং চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে কোন দলিল রেজিষ্ট্রি না হয়- সেজন্য লিখিত আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনপত্রে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় এবং বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সুপারিশ ছিল। এই আবেদনপত্র পেয়ে চিতলমারীর তৎকালীন সাব-রেজিষ্টার দলিল লেখকদের ডেকে কথা দিয়েছিলেন ওই সুব্রত সরকারের কোন জায়গাজমির যেন দলিল না হয়। এরপরও সুব্রত সরকার কৌশলে ওই জমি বিক্রি করেছে। কিন্তু আমার পাওনা টাকা দেয়নি। তিনি বলেন, সুব্রত সরকার কতটা প্রভাবশালী যে মাননীয় এমপি শেখ তন্ময়, ডিসি সাহেবের সুপারিশকেও অমান্য করার ক্ষমতা রাখেন। অথচ সুব্রত নারী নির্যাতন, মাদক, চুরি, মারামারি, উত্তোলনসহ বহু মামলার আসামী।

স্থানীয় প্রশাসন কেন তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় না ? তাই কোথাও ঠাঁই না পেয়ে আমি আজ আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি।’
এ ব্যাপারে সুব্রত সরকার জানান, কবিতা আমরণ অনশনে মরলেও ভাল, বাঁচলেও ভাল। তার সাথে আমার কোন লেনদেন নেই।
দলিল সম্পন্নকারী সাব-রেজিষ্টার সম্প্রতি বদলী হয়েছেন। মুঠোফোনে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সোমবার চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, কবিতা সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার অফিসে একাধিকবার বসা হয়েছে। তাতে প্রমানিত হয়েছে সুব্রতর কাছে কবিতা টাকা পাবে। কবিতার আমরণ অনশনের কথা শুনে ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছি। তার কোথাও বসবাসের জায়গা না থাকলে সরকারের পক্ষ হতে একটি বসতঘরের ব্যবস্থা করা হবে। #