রাণীনগরে শীতেও বিদ্যুতের লোডশেডিং, ইরি-বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা

তীব্র শীতের মধ্যেও নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা সদরের বাহিরে গত তিন-চার দিন ধরে দিন-রাতে অর্ধেক সময়ই বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে চড়ম বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষক ও গভীর এবং অগভীর নলকূপের মালিকরা।

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বোরো আবাদে ধান রোপনের জমিতে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সঠিক সময়ে জমিতে ধান রোপনও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ রাণীনগর জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা জুড়ে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে সাড়ে ৯শ’ সেচপাম্প সংযোগ রয়েছে। উপজেলা সদরে ও আবাদপুকুর এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের দুুইটি সব-স্টেশন। গ্রহকদের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দুইটি সাব-স্টেশনে ১০টি ফিডারে বিভক্ত করা হয়েছে। আর এসব ফিডারের মাধ্যমে সকল গ্রহকদের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

রাণীনগর পল্লী বিদ্যুতের অধীনে গত তিন-চার দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ৮ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৪ থেকে ৫ মেগাওয়াট করে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলায় গত সপ্তাহ থেকে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে পানি সেচ কার্যক্রম এবং ধান রোপন শুরু হয়েছে। যারা নিজস্ব শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন তারা ইতি মধ্যেই জমিতে হাল-চাষ করে ধান রোপন শুরু করেছেন। আর যেসব কৃষকের জমি গভীর এবং অগভীর নলকূপের আওতায় আছে- সে সকল কৃষকরা অনেকেই জমিতে এখনো পানি সেচ পাননি। কৃষকরা বলছেন, পল্লী বিদ্যুতের দিন-রাতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকরা অনেকেই জমিতে পানি সেচ না পাওয়ায় ধান রোপন শুরু করতে পারেনি। আর যারা জমিতে সেচ পেয়েছেন তারা হাল-চাষ করে ধান রোপন করছে।

ফলে সঠিক সময়ে জমিতে বোরো ধান রোপন নিয়ে শঙ্কায় পরেছেন চাষীরা। উপজেলার শলিয়া গ্রামের অগভীর নলকূপের মালিক আব্দুস সাত্তার জানান, তার নলকূপের আওতায় কৃষকদের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে অগভীর নলকূপ চালু করেছি। এরই মধ্যে দিন-রাতে অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারনে এখনো পুরো জমিগুলোতে পানি সেচ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সঠিক সময়ে জমিগুলোতে পানি সেচ দিয়ে ধান রোপন করতে না পারলে ইরি-বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বেলঘড়িয়া পশ্চিম মাঠের একটি গভীর নলকূপের অপারেটর প্রতাপ চন্দ্র বলেন, গত চারদিন আগে নলকূপটি চালু করেছি। এই নলকূপের আওতায় এলাকার কৃষকের ৭০ থেকে ৮০ বিঘা জমি আছে। দিনের বেলা অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নলকূপের আওতায় অর্ধেক জমিতে এখনো পানি সেচ দিতে পারিনি। তিনি বলছেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং না হলে সঠিক সময়ে আমরা কৃষকদের জমিতে পানি সেচ দিতে পারব এবং কৃষকরা জমিতে বোরো ধান রোপন করতে পারবে। রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি ইরি-রোরো মৌসুমে উপজেলায় ১৯ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে ধান রোপোনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই উপজেলার কৃষকেরা জমিতে বোরো ধান লাগানো শুরু করে দিয়েছেন। সময় মতো জমিতে পানি সেচ দিয়ে ধান রোপন করতে না পারলে বোরোর ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। চলতি মাসের শেষের দিকে উপজেলায় বোরো ধান রোপন শেষ হবে বলেও জানান তিনি। নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর রাণীনগর জোনাল অফিসের ডিজিএম আকিয়াব হোসেন বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। কৃষকদের বোরো আবাদের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে লোডশেডিংয়ের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *