মৃত্যুর আগে ভাষাসৈনিক স্বীকৃতি চান নড়াইলের রিজিয়া খাতুন

মৃত্যুর আগে ভাষাসৈনিক স্বীকৃতি চান রিজিয়া খাতুন বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালে সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকে জীবন উৎসর্গ করে অমর হয়ে আছেন। ঢাকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ভাষার আন্দোলন শুরু হয়। ভাষার আন্দোলনে ঢাকার ছাত্ররা দেশের ছাত্রসমাজকে রাজপথে নামার আহ্বান জানালে তার ঢেউ এসে পড়ে জেলা শহরগুলোতে। এই ঢেউ তৎকালীন নড়াইল মহকুমা শহর নড়াইল জেলাকেও স্পর্শ করেছিল। আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তারা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে প্রকম্পিত করেছিল এই জনপদ। বাদ যায়নি ছাত্রীরাও। তখন রাস্তায় নেমে আসা ছাত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন রিজিয়া খাতুন। তখন তিনি ছিলেন শহরের দিলরুবা গার্লস হাই স্কুলের (বর্তমান নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) ছাত্রী। তিনি ছিলেন ইতিহাসখ্যাত নড়াইলের তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা নূরজালাল মোল্যার মেয়ে। রাজনীতির আবহে বেড়ে ওঠা রিজিয়া খাতুনও নড়াইলের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন এবং অন্যান্য ছাত্রকর্মীদের সঙ্গে মিছিল মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন। মেয়েদের মধ্যে মিছিলে নেতৃত্ব দিতেন সুফিয়া খাতুন, রিজিয়া খাতুন ও রুবি বেগম। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণের খবর সন্ধ্যায় নড়াইলে পৌঁছালে ওই রাতেই অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রিজিয়া খাতুন নড়াইল পৌর পার্কের কালিদাস ট্যাঙ্কের পাড়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন এবং সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। ভাষা আন্দোলনে তার অবদান স্থানীয়ভাবে স্বীকৃত হলেও এখনও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত হয়নি। গুরুতর অসুস্থ অশীতিপর রিজিয়া খাতুন বর্তমানে শহরের আদালতপুর এলাকায় বসবাস করছেন। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি শয্যাশায়ী। তার মেয়ে স্বতন্ত্রা বুলবুল সন্তু ইংরেজির প্রভাষকের চাকরি ছেড়ে মায়ের সেবাযত্ন করছেন। ভাষা আন্দোলনের এই বীর যোদ্ধার একমাত্র দাবি ভাষাসৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। অসুস্থ রিজিয়া খাতুন বলেন, শহরের মহিষখোলা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আফসার উদ্দিনের বাড়িতে বৈঠক হত। তখন ছাত্রীদের মধ্যে আফসার উদ্দিনের মেয়ে সুফিয়া খাতুন, রুবি ও আমি অন্য ছাত্রকর্মীদের সঙ্গে মিটিংয়ে অংশ নিতাম। আমরা ছাত্রদের সংগঠিত করার জন্য কাজ করেছি। মিছিলে, মিটিংয়ে, ভাষার জন্য সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। আমি এবং আরও ১০-১২ জন মিলে পৌরসভা পার্কের তৎকালীন কালিদাস ট্যাঙ্কের কাছে প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করি। তিনি বলেন, আমি কখনই কারও কাছে কিছু চাইনি। ভাষা আন্দোলনে সরকার যদি আমার অবদানের স্বীকৃতি দেয় তাহলে হয়তো আমি প্রসন্ন চিত্তে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারব। এসব কথা বলতে গিয়ে তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি নড়াইলের নারী নেত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দিলারা বেগম বলেন, নড়াইলের ভাষা আন্দোলনে রিজিয়া খাতুনের ভূমিকা জাতীয় স্বীকৃতির দাবি রাখে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুন্সী হাফিজুর রহমান ভাষা আন্দোলনে নড়াইল ও রিজিয়া খাতুনের ভূমিকা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৫২ সালে নড়াইলে যে মিছিল হয়েছিল তাতে রিজিয়া খাতুনের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান, রিজিয়া খাতুনকে যেন ভাষাসৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন বলেন, আমরা দাবি করছি সেই সময় যেসব নারী সাহসিকতার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হোক। সেই সময় মাতৃভাষার জন্য রাজপথে নেমে আসা নারী রিজিয়া খাতুনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে এই প্রত্যাশা নড়াইলবাসীর।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *