মণিরামপুরে বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু পারাপারে চলছে অনুমোদনহীন টোল আদায়ের নামে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি

যশোরের মণিরামপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতু পারাপারে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির মহা উৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেতু পরিদর্শনের ক্ষেত্রে অনুমোদনহীন টিকিটের মাধ্যমে জনপ্রতি আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা করে। প্রশাসনের অনুমোদন না থাকলেও প্রকাশ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে টিকিট। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন না করার নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দেশের অন্যতম বৃহত্তর জলামহল ঝাঁপা বাওড় বেষ্টিত ঝাঁপা গ্রাম। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী মল্লিকপুর গ্রাম থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাওড়টি প্রায় ৩ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দেড় কিলোমিটার প্রস্থ ঝাঁপা গ্রামকে বেষ্টিত করেছে।

বাওড়টি ওই গ্রামেরই আরেক প্রান্ত কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে শেষ হয়েছে। ছোট ছোট দু’টি সেতু গ্রামটির প্রত্যন্ত এলাকার শেষ প্রান্তে সংযোগ স্থাপন করলেও তা ব্যবহার করে জেলা বা উপজেলা শহরে যাতায়াতের রাস্তা বাড়িয়ে দেয় প্রায় দশ কিলোমিটারেরও বেশী। যে কারনে উপজেলার বৃহত্তর দ্বীপ গ্রাম ঝাঁপার বাওড়ের উপর রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সেতু নির্মাণ ওই গ্রামের অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া আশ্বাসেই রয়ে গেছে এলাকাবাসীর স্বপ্ন। ফলে ওই গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার উপজেলা ও জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগের মধ্যে ছিলো।

ঝাঁপা গ্রামবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার এ দীর্ঘদিনের অসুবিধা লাঘবে স্থানীয় একটি যুব সংগঠন বাওড়ের উপর প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ভাসমান সেতু নির্মান করে দেশব্যাপী সাঁড়া ফেলে দেয়। দেশের একমাত্র ও দীর্ঘতম এ ভাসমান সেতু মূহুর্তে জনপ্রিয় হয়ে পড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকের সমাগম ঘটতে থাকে এখানে। বাওড়ের অপর প্রান্তে গড়ে ওঠে পিকনিক স্পট ও ছোট খাটে বাজার। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেতু পারাপারে প্রথমে পাঁচ টাকা করে জনপ্রতি নেওয়া হলেও বর্তমানে লোক সমাগম বেশী হওয়া তা বাড়িয়ে করা হয়েছে বিশ টাকায়। প্রশাসনের অনুমোদন না থাকলেও বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতুর নামে ছাপানো হয়েছে বিশ টাকার টিকিট।

প্রতিদিন আদায় করনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, সরকারের পর্যটন মন্ত্রনালয় ঝাঁপা বাওড়ের ভাসমান সেতু কেন্দ্রিক এলাকার উন্নয়নে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে ভাসমান সেতুকে ঘিরে এক শ্রেণীর স্থানীয় নেতাদের মদদে ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে। সামান্য পথের সেতু পারাপারে বিশ টাকা নেওয়াটা খুবই বেশী বলেও মনে করেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুমোদন ভাবে আদায় করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। বরং এখানকার পর্যটন শিল্পকে দূর্বৃত্তায়নমুক্ত রাখতে এখনই ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী বলে মনে করে এলাকার সচেতন মহল।

ঝাঁপা ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি মোঃ রশিদের কাছে টোল আদায়েয় অনিয়ম ও অনুমোদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের বিভিন্ন খরছ আছে তাই আমরা নিজ গ্রামবাসী বাদে পর্যটকদের কাছ থেকে মৌখিক অনুমোদনের ভিত্তিতে টাকা নিয়ে থাকি। তবে এ বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার টোল আদায়ের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। টিকিট ছাঁপিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টা শুনেছি, সেতু নির্মান বা পরিচালনাকারীদের কাছে বৈধ্যতা জানতে চাওয়া হবে, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *