প্রবীণকে ফেলে গেল ঈদগাঁয়

শনিবার সকালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোপালকান্দি গ্রামের ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে যান তাকে

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে রয়েছেন তিনি

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল আক্ষেপ করে বলেন, “আগে হাসপাতালে কোনো রোগী মারা গেলে অনেক ক্ষেত্রে স্বজনরা চিকিৎসককে কসাই আর হাসপাতালকে কসাইখানা বলে মন্তব্য করতেন। আর সরকারি হাসপাতাল হলে তো অভিযোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। করোনা সেই চির চেনা প্রথা পাল্টে দিয়েছে

করোনা সন্দেহে ওই প্রবীণ তার বাড়িতে এবং তার একমাত্র সন্তানের বাড়ি থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন। স্বজনদের মায়ামমতা, সেবাযত্ন, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন রাস্তার আবর্জনায়

ঠিক সেই সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবতাবাদী চিকিৎসক সরকারি চিকিৎসালয়। যেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি আহারও জুটবে তার! করোনার সংক্রমণ না হলে এমন করুণ বাস্তবতা হয়ত অনেকের অজানাই থেকে যেত

করোনাকাল যেন স্বজন মানুষ চেনার এক কঠিন সময়,” মন্তব্য জুড়ে দেন করোনাভাইরাস বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, ওই প্রবীণ ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের এক কারখানায় কাজ করতেন। সম্প্রতি জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হলে তাকে কারখানা থেকে ছুটি দেয়। সেখান থেকে শনিবার সকালে তিনি মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোপালকান্দি গ্রামে তার বাড়িতে ফেরেন। সেখানে পৈত্রিকবাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর তার আশ্রয়স্থল। তার স্ত্রী জীবিত নেই, তার একমোত্র সন্তান মেয়ে; যার বিয়ে হয়ে গেছে

করোনাভাইরাস কবলিত ঢাকা থেকে জ্বর, কাশি নিয়ে ফেরায় স্বজনরা তাকে পৈত্রিকভিটার থাকতে বাধা দেয়।মিনতি করেওওই ভিটায় থাকার সুযোগ হয়নি তার। নিরূপায় হয়ে তিনি একই ইউনিয়নের মুক্তিরকান্দি গ্রামে তার মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানেও কোভিড১৯ আক্রান্ত সন্দেহে ঠাঁই মেলেনি তার। এরপর মুক্তিরকান্দি গ্রামের লোকজন তাকে স্থানীয় হাজী মার্কেটের পাশের এক ঈদগাহ মাঠে ফেলে রেখে যায় বলে জানান তিনি

পরে স্থানীয়রা মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুশরাত জাহান মিথেনকে খবর দেন

ডা. নুশরাত জাহান মিথেন জানান, তাৎক্ষণিক সিভিল সার্জনকে জানালে তার নির্দেশে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ওই প্রবীণ ব্যক্তিকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এনে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়

তবে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, “প্রবীণের জ্বর, কাশি তেমন গুরুতর নয়, করোনায় আক্রান্তের উপসর্গও তেমন নেই

তারপরও যেহেতু তিনি করোনা কবলিত এলাকা থেকে এসেছেন সেজন্য তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *