নওগাঁর রাণীনগরে মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
নওগাঁর রাণীনগরে সিফাত হোসেন (১১) নামে এক পঞ্চম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রকে বেত দিয়ে মারপিট করে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রকে বেত, চরথাপ্পর ও লাথি মেরে মারপিট করে ব্যাপক নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় ছাত্র সিফাত গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে রাখা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার উপজেলার এনায়েতপুর আব্দুল হাই সিদ্দীকিয়া কওমী মাদ্রাসায়। আহত সিফাত এনায়েতপুর সোনারপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদের ছেলে। সে ওই মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র।
সিফাতের পরিবারের অভিযোগ, একদিন মাদ্রাসায় না যাওয়ায় সিফাতকে মাদ্রাসা কক্ষে ব্যাপক নির্যাতন করেছেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান। নির্যাতনের পর সিফাতকে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি আসতে দেওয়া হয়নি। টিফিনের সময় বাড়ি গিয়ে ঘটনাটি পরিবারকে জানায় আহত সিফাত।
সিফাতের বাবা মামুনুর রশিদ জানান, সোমবার আমার ছেলে সিফাত মাদ্রাসায় যায়নি। মঙ্গলবার সকালে সিফাত মাদ্রাসায় যান। আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে সিফাত মাদ্রাসা কক্ষে বসে ছিল। এ সময় প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান গিয়ে সিফাতকে বেত, চরথাপ্পর ও লাথি মেরে মারধর করেন। এতে আমার ছেলে গুরুত্বর আহত হন। পরে সিফাত বাড়ি এসে ঘটনাটি আমাদের জানায়। এরপর ছেলের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানাতে পারি ছেলের বাম হাত ভেঙে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। ব্যস্ত থাকায় কোথাও কোন লিখিত অভিযোগ করতে পারিনি, তবে অভিযোগ দিবো। এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মাদ্রাসা ছাত্র সিফাত হোসেন বলেন, আমি ক্লাসরুমে বসে ছিলাম। সাইদুর স্যার এসে বলে কি করিচ্ছু হে বলেই প্রথমে আমাকে একটা চর মারে। এরপর মাদ্রাসায় আসিস নি কেন বলেই স্যার আমাকে বেত দিয়ে পিঠে, হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করতে থাকেন। ওই বেত ভেঙে গেলে স্যার আবারও আরেকটি বেত এনে আমাকে মারধর করেন। এ সময় হাতে বেতের আঘাত লেগে আমার এক হাত ভেঙে যায়। এরপরেও স্যার আমাকে পা দিয়ে লাথিও মারেন। আমি পালিয়ে আসার চেষ্টা করলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে আসতে দেওয়া হয়নি। পরে টিফিনের সময় আমি বাড়ি চলে আসি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনায়েতপুর আব্দুল হাই সিদ্দীকিয়া কওমী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, সোমবার মাদ্রাসায় একজন শিক্ষক ছিল না। তাই সিফাতসহ ছাত্ররা যুক্তিবুদ্ধি করে ক্লাস বর্জন করে। মঙ্গলবার সিফাতসহ অন্য ছাত্ররা মাদ্রাসায় এলে তাদের কাছে জানতে চাই কেন তারা ক্লাস বর্জন করেছেন। এ সময় ছাত্ররা কোন কথা না বলে চুপচাপ থাকার পর বলে শিক্ষক নাই তাই মাদ্রাসায় আসিনি। তখন তাদের শাসন করার জন্য সিফাতসহ কয়েকজনকে চিকন একটি বেত দিয়ে তিন-চারটা করে বারি দিয়েছি। আর সিফাতকে মেরে হাত ভেঙে দেওয়া এবং নির্যাতন করার যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে তা সম্পন্ন মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) এসএম রবিন শীষ বলেন, এমন ঘটনার কথা কেউ আমাকে জানায়নি এবং কোন অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।