কোটালীপাড়ায় ক্ষেতের ধান ঝলসে কৃষকের সর্বনাশ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৪টি ইউনিয়নে গরম হওয়ায় ৬ শ’ হেক্টর ক্ষেতর ধান ঝলসে গেছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। কোটালীপাড়ার কান্দি হিরণ, আমতলী, পিঞ্জুরী ইউনিয়ন জুড়ে ক্ষেতের ধান নিয়ে কৃষকের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কান্দি ইউনিয়নে। অন্য ৩টি ইউনিয়নে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। কষ্টের ফসল মুহুর্তের মধ্যে নষ্ট হওয়ায় কৃষক চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামের কৃষক আমল হালদার বলেন, গতকাল রোববার রাত ১১ টার পর দিকে অত্যাধিক গরম হাওয়া বয়ে যায় । তখন ঘরে ও বাইরে আমরা সমান গরম অনুভব করি। সকালে দেখি জমির সব ধানের শীষ ঝলসে গেছে। পুরোক্ষে সাদা বর্ন ধারণ করেছে। এ থেকে ধান হবেনা। ধান গাছে মড়ক লেগেছে। কৃষি কর্মকর্তারা খবর পেয়ে সোমবার ধানের ক্ষেত পরিদর্শণ করেছেন। ক্ষেতের ধান নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি।
একই ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের কৃষক শ্রীবাস গাইন বলেন, আমাদের এলাকা নিম্নজলা ভূমি বেষ্টিত। এখানে বছরে একটি মাত্র ধান হয়। এ ধান দিয়ে আমাদের সারা বছর চলতে হয়। হঠাৎ গরম বাতাস এসে আমাদের ফলন্ত ধান কেড়ে নিয়েছে। এতে আমাদের মাথায় বাজ পড়েছে। সামনের বছর পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে বাঁচব তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি।
একই ইউনিয়নের মাচারতারা গ্রামের কৃষক রাধাকান্ত মল্লিক বলেন, সরকারি বীজ ও অন্যান্য সহায়তা পেয়ে ৩ বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ করেছিলাম। আমার ক্ষেতের সবধান ঝলসে গেছে। হাইব্রিড ধানেই বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, এ বছর এ উপজেলায় ২৪ হাজার ৯ শ’ ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখন ধানের শীষ বের হয়ে ফ্লাওয়ারিং হচ্ছে। এ সময় লেমা ও পেলিয়া বের হয়ে পারগায়ন ঘটে। কয়েকদিন ধরে এখানকার তাপমাত্রা ৪০ এর কাছাকাছি যাচ্ছিল। রোববার রাতে কোটালীপাড়ার ওপর দিয়ে গরম হাওয়া বয়ে গেছে। যে সমস্ত ক্ষেতে ফ্লাওয়ারিং চলছে সে সমন্ত ক্ষেতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধানের শীষ ঝলসে গেছে। হাইব্রিড ধানে বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্ষেতের ফসল সাদা হয়ে গেছে। যেখানে ৩/৪ দিন আগে ফ্লাওয়ারিং হয়েছে বা পরে হবে সেসব ক্ষেতে কোন ক্ষতি হয়নি। প্রাথমিকভাবে ৬ শ’ হেক্টর জমির ফসল ঝলসে সাদা হয়ে গেছে বলে নিরূপন করা হয়েছে । এতে ৮ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার টন ধান নষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ৪টি ইউনিয়নের কৃষকের এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি সহ আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোটালীপাড়ার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মাঠে নেমেছি। আর কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকলে সেটিরও পরিমান নিরূপন করছি। তবে এখন পর্যন্ত সব ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবারের মধ্যে আমরা এটি নিরূপন করতে সক্ষম হবো। তারাপর প্রতিবেদন তৈরী করে উর্ধতন কতর্ৃপক্ষের কাছে পাঠাবো।