মাঠের অভাবে গেমে আসক্ত তরুণেরা , ওদের বাঁচান

এই সময়টিতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও আশেপাশের অঞ্চলে এক সময় প্রচুর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হতো। শীতকাল যেহেতু, বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাই ছিলোনা। আমরা সারাবছর অপেক্ষা করতাম এই সময়ের জন্য। জি.টি. স্কুল, কলেজ, হেলিপ্যাড, মল্লিকের মাঠ, বাশুড়িয়া মাঠ, শিশু পার্কের মাঠ, ঘোষের ঘাট, কুশলি, নীলের মাঠ, বাঁশবাড়িয়া, তারাইল, চিংগইড় ও হিজলা স্কুল মাঠ ইত্যাদিতে কোন না কোন টুর্নামেন্ট থাকতো। ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরা প্রতিটি ম্যাচ দেখতে মাঠের চারপাশে শত শত দর্শক জমা হতো। পরের দিন খেলা থাকলে চিন্তায়-টেনশনে আগের রাতে ঘুমই হতোনা! নিয়মিত খেলার কারণে আমাদের কৈশোর ও যৌবনের সময়টি কখনোই মাদক, ইভটিজিং, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মধ্যে যেতে পারেনি। এখন যেভাবে মোবাইলের নেশা সেটিও ছিলোনা। আর ৪-৮-১৬ দলীয় টুর্নামেন্ট অনেক বেশি করে আয়োজিত হওয়ার কারণে পুরো অঞ্চলের ছেলেরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেতো, পরস্পরকে জানাশোনা হতো, বিভিন্ন এলাকার মানুষ ও সংস্কৃতি আমাদের জীবনবোধকে সমৃদ্ধ করতো। এ কারণে সে সময় সমাজ এমন অস্থিতিশীল ছিলোনা। এখন এ ধরনের বড় আয়োজন কেউ করছেনা। শর্ট পিচ নামের যে ফালতু খেলা আয়োজিত হচ্ছে তাতে নেই আবেগ, নেই প্রকৃত বিনোদন আর মানসিক প্রশান্তি! তাই ফ্রি ফায়ার আর পাবজি আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংস করছে। তারা মাঠ ছেড়ে এসবে জড়িয়ে পড়ছে। সঙ্গে ইন্টারনেটের নানা বাজে জগতের হাতছানি তো আছেই। আছে মাদকের ভয়াবহ নেশা। এসব নিয়ে আমাদের এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের ভাবনা নেই বলেই আমার পর্যবেক্ষণ। কিশোরদের খেলার মাঠ নেই। কোনো পাড়ায় একটি স্থায়ী খেলার মাঠ নেই। যে মাঠগুলো আছে তা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। ব্যক্তি পর্যায়ের খোলা মাঠ বাণিজ্যিক ও ক্ষুদ্রস্বার্থে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। তাই খেলার মাঠ ও খেলাহীন কিশোরেরা প্রতিটি পাড়ায় রাস্তার পাশে, ব্রিজে, খোলা জায়গায় মোবাইল ফোন নিয়ে গোল হয়ে ” এই মার, ধর,” খেলে বেড়াচ্ছে। এই প্রজন্মকে আমি বলি “ফায়ার্ড জেনারেশন”। কারণ এরা যে সমাজের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে এরা সেটি অনুধাবন করছেনা, আর সমাজপতি নামের অবিমৃষ্যকারীরাও এই কিশোর-কিশোরীদের বখে যাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া আমাদের সমাজে দেখা দিবেই সামনে! একটি বিষণ্ণতায় পূর্ণ অনুৎপাদনশীল প্রজম্ম, একটি হতাশাগ্রস্ত দরিয়ায় ভেসে যাওয়া প্রজন্ম! ওদের জন্য আমার মায়া হয়! ওদের কিশোর ও প্রাক-যৌবনকালের বিকাশে এই সমাজের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেই। যা বলছিলাম, খেলা। মানুষের মনে প্রশান্তি দেয়। মানুষকে বিনোদন দেয়। জুয়া, নেশা, যৌন নিপীড়ন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, লেজুড়বৃত্তি থেকে বিরত রাখে। কিন্তু কোথায় খেলা? কবে ফিরবে সেই মাঠ? কোথায় গিয়ে ঠেকবে এ প্রজন্ম যদি এ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে চান, তাদের উত্তম মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান, যদি এই সমাজে তাদের ইতিবাচক অবদান দেখতে চান তবে ওদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসুন হে সমাজের মুরব্বি, পতি ও নেতৃবৃন্দ। ওদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করুন। বেশি করে খেলা আয়োজন করুন। অন্যথায় এই তারুণ্য বখে গিয়ে সমাজের বোঝা বা ক্ষতির কারণ বা হুমকি হয়ে উঠলে তার দায় আপনারা এড়াতে পারবেননা। কারণ, ওরা ভবিষ্যতে আপনাদের মুখোমুখি হবেই হবে। তখন যদি এই ছেলেরা প্রশ্ন করে,” আমার কৈশোর ও প্রাক-যৌবনকে সুস্থভাবে, সৃজনশীলতার সঙ্গে বিকশিত করতে আপনার কী অবদান?”—কী জবাব দিবেন এ প্রশ্নের তা কি ভেবেছেন?



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *