লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে কোটালীপাড়ায় শেষ হলো ৩ দিনব্যাপী নৌকা বা
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় উৎসব মুখোর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ৩দিন ব্যাপী দেশের দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌকা বাইচ । এ নৌকা বাইচ প্রচীন ঐতিহ্যবাহী বিল বাঘিয়ার বাইচ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছরের মতো এ বছরও এই নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের মিলন মেলা বসেছিল কালিগঞ্জে। তবে করোনার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লোকসমাগম অনেকটা কম ছিল।
গত সোমবার থেকে নান্দনিক এ নৌকা বাইচ বিপুল আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল। আজ বুধবার ৩দিন ব্যাপী এ নৌকা বাইচ শেষ হয়। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যে লালিত দু’শ বছরের আকর্ষনীয় এ নৌকা বাইচে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর , পিরোজপুর ,নড়াইল , বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের শতাধিক সরেঙ্গা,ছিপ,কোষা,চিলাকাটা, জয়নগর বাচারী নৌকা অংশ নেয়।
আবহমান গ্রাম বাংলার অতি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে লাখো প্রানের আনন্দ উচ্ছালতায় উপজেলার বাবুর খালে কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নৌকা বাইচ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাড়তি আকর্ষন ছিল নৌকায় নৌকায় মেলা । হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে এ নৌকা বাইচ শুরু হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ খালের দু’পাড়ে দাড়িয়ে নৌকা বাইচ প্রত্যক্ষ করেন । প্রতিদিন দুপুর থেকে নানা বর্নে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টি নন্দন এসব নৌকা তুমুল বাইচ শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকা বাইচের একের পর এক ছোপ।
ঠিকারী ও কঁাশির বাদ্যের তালে জারি সারি গান নেচে গেয়ে – হেঁইও হেঁইও রবে বৈঠার ছলাৎ- ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়। দু’ কূলে দাড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে জাগে দোলা। মাল্লাদের সাথে সমবেত হন অগনিত সমর্থক ও দর্শক। তারা উৎসাহ দেন বাইচের নৌকার মাল্লাদের। নদীর দু’পাড়ে দাড়িয়ে থাকা মানুষের করতালী ও হর্যধ্বনিতে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। গোটা এলাকায় সঞ্চারিত হয় উৎসবের আমেজ।
কলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, জলাভূমি বেষ্টিত কোটালীপাড়ার জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল নৌকা। প্রায় দু’শত বছর আগে লক্ষ্মী পূজার সময় নৌকা নিয়ে এলাকার মানুষ জমিাদার শিবরাম চৌধুরীর বাড়িতে যেতেন। পূজা দেখে ফেরার সময় নৌকায় নৌকায় পাল্লা হতো। নৌকার মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের চিন্তা থেকে নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু হয়। সে থেকেই লক্ষ্মী পূজার পরের দিন থেকে এ অঞ্চলের নৌকা বাইচ হয়ে আসছে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে। এ বছর করোনার কারণে লোকসমাগম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা কম হয়েছে।
জেলা পরিষদ সদস্য দেবদুলাল বসু পল্টু বলেন , ছোট বেলা থেকে এ নৌকা বাইচ দেখে আসছি। এখানে কখনোই কাউকে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বাইচের আয়োজন করতে হয়না। স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে এ এলাকায় বাইচ হয়ে আসছে। কোটালীপাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা হওয়ার কারণে এখানের নৌকা বাইচগুলো নৌকা উৎসবে পরিণত হয়।
কলাবাড়ি শেখ রাসেল কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, জীবনে অনেক স্থানের নৌকা বাইচ দেখেছি। কিন্তু এখানকার মতো এত বড় , কালার ফুল ও রাজকীয় ঢং এর নৌকা বাইচ আমি দেখিনি। শুধু কালিগঞ্জই নয় গোটা কলাবাড়ি ইউনিয়ন ব্যাপী এই নৌকা বাইচ উপলক্ষে আনন্দের ঢল নামে।
কলাবাড়ি ইউনিয়নের হিজলবাড়ি গ্রামের গৃহবধু লাভনী বর্ণিক বলেন, এই নৌকা বাইচকে কেন্দ্রে করে আমাদের এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অতিথি আসে। আমরা আনন্দমূখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে সকলকে নিয়ে নৌকা বাইচ দেখি ।