৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ সালে জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।

 বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা পালন করেন । ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতা – সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ঢাকার কারাগারে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই তখন এ চারজন নেতা ছিলেন দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শেখ মুজিবকে হত্যার প্রায় আড়াই মাস পরে কারাগারে এ চার নেতাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তখন অনেকটা দিশেহারা। চারজন সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই কারাগারে এবং অনেকে আত্ন গোপনে ছিলেন। বাকি নেতারা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্যে নতুন রাস্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে সমঝোতা করেন। অনেকে আবার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। তৎকালীন রাজনীতির বিশ্লেষক এবং গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন জেল হত্যাকাণ্ডের সাথে ৩রা নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কিত। কারণ মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ বা বাকশালের পক্ষে হচ্ছে। কিন্তু খালেদ মোশাররফ এবং তার সমর্থকদের কার্যকলাপ থেকে এ ধরনের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি বলে মি: আহমেদ উল্লেখ করেন। মি: আহমেদ বলেন , “ক্ষমতাসীন মোশতাক বা তার সমর্থকরা চাননি যে তাদের বিরোধী আরেকটি শক্তি শাসন ক্ষমতায় পুনর্বহাল হোক। ঐ ধরনের একটা সরকার যদি হতো তাহলে জেলে থাকা সে চারজন ছিলেন সম্ভাব্য নেতা।” তিনি বলেন এ সম্ভাবনা থেকে জেল হত্যাকাণ্ড হতে পারে। পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকায় ছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ। তখন ঢাকা সেনানিবাসে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এসব ঘটনা প্রবাহ বেশ কাছ থেকে দেখেছেন। তার সে অভিজ্ঞতা নিয়ে মি: হোসেন একটি বই লিখেছেন ‘বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায়: ১৯৭৫-৮১’ শিরোনামে। শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহেমদকে পরিচালনা করছিলেন। মি: হোসেন বলেন বঙ্গভবনের থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটা সংঘাত চলছিল সেনানিবাসের উর্ধ্বতন কিছু সেনা কর্মকর্তাদের সাথে। মি: হোসেন বলেন, ” খন্দকার মোশতাক যে বেশিদিন ওখানে টিকবেন না, এটাও ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল। তখন আবার সিনিয়র অফিসারদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল। কারা মহাপরির্দশক একটি কাগজে চার ব্যক্তির নাম লিখে, জেলার আমিনুল রহমান কে দিলেন। সেই চার জন ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাজউদ্দিন আহমেদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এবং এএইচ এম কামরুজ্জামান। কিন্তু জাতীয় চার নেতাকে দুই রুমে রাখা হয়। একটি রুমে ছিলেন ক্যাপ্টন মনসুর আলী, ও এ এইচ কামরুজ্জামান এবং অপর রুমে ছিলেন তাজউদ্দিন আহম্মদ, ও তাজউদ্দিন আহমেদ ক্যাপ্টেন।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *