প্রনোদনার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের সরনপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ফোরকান আহম্মদ (৬৫) এর মাঠে চাষাবাদ করার কোন জমি না থাকায় ১১ শতক জমির ওপর বসতবাড়িতে সাতটি গাভী পালন করে আসছেন। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে অতিকষ্টে সংসারের খরচ নির্বাহ করে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে সরকার ঘোষনা দিয়েছে করোনাকালিন দূর্যোগের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ পারিবারিক ক্ষুদ্র খামারিদের মাঝে প্রনোদনা দেওয়ার। সে মোতাবেক প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে গাভী পালনকারী প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ খামারির নামের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরনের।

কিন্তু সরনপুরের ক্ষতিগ্রস্থ খামারি ফোরকান আহম্মদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে তার কাছ থেকে ইউপি সচিব ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৫৩০ টাকা, অনলাইন ফিস ২০ টাকাসহ মোট ৫৫০ টাকা আদায় করেছেন। আবার রোহিতা গ্রামের অপর খামারি শামিনুর রহমানের নাম অন্তর্ভূক্ত করতেও একইভাবে ৫৫০ টাকা আদায় করা হয়েছে। শুধু ফোরকান আহম্মদ অথবা শামিনুর রহমানের কাছ থেকে নয়। একইভাবে নাম অন্তর্ভূক্ত করতে ইতিমধ্যে ৯৫ জন খামারির কাছ থেকে টাকা আদায় করার সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড.আবুজার সিদ্দিকী জানান, করোনাকালিন দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র পারিবারিক খামারীদের প্রনোদনার জন্য মনিরামপুর উপজেলায় মোট দুই হাজার চারশত খামারির মধ্যে একহাজার চারশত জনের চুড়ান্ত তালিকা প্রনয়নের কাজ চলছে।

প্রতি খামারির নুন্যতম পাঁচ থেকে ১০ টি গাভী থাকতে হবে। এছাড়াও এসব খামারে অন্তত দুইটি গাভী দিনে ১০ কেজি করে দুধ দেয়। এমন খামারির নামের তালিকা চুড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করার কথা। প্রতি খামারিকে সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা দেয়া হতে পারে। আর এসব তালিকা মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেনকে সভাপতি এবং প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড.আবুজার সিদ্দিকীকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মনিটরিং কমিটি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের তালিকা করতে উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

সে মোতাবেক রোহিতা ইউনিয়নে মোট ১৪০ টি খামারির নাম অন্তর্ভূক্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে রোহিতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু আনসার এবং সচিব কৃঞ্চ গোপাল মুখার্জী প্রতি খামারির কাছ থেকে ট্রেড লাইলেন্সের নাম করে ৫৫০ টাকা হারে আদায় করার। অবশ্য ইউপি সচিব কৃঞ্চ গোপাল মুখার্জী জানান, ইউনিয়ন পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি টাকা আদায় করছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আবু আনসার জানান ভিন্ন কথা। তিনি জানান, সচিবের পরামর্শক্রমে পরিষদের আনুসঙ্গিক খরচ নির্বাহের জন্য এ টাকা আদায় করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জানান, তার ইউনিয়নের প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মীর মাধ্যমে খামারির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

এ জন্য কারোর কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। তালিকা মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড.আবুজার সিদ্দিকী জানান, তালিকায় অন্তর্ভূক্তের জন্য কোন টাকা নেওয়ার বিদান নেই। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হোসেন জানান, টাকা আদায়ের বিষয়টি খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *