বেদনাবিধূর শোকের মাস আগষ্ট
![](https://dainikshatabarsa.com/wp-content/uploads/2020/07/0022.jpg)
![](https://dainikshatabarsa.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
——শান্তনু রানা রুবল——লেখক–সদস্য সচিব-চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ। সময়ের ব্যবধানে ফিরে এল বাঙ্গালীর জাতির শোকের মাস রক্তস্নাত আগষ্ট। শোকাবহ আগষ্টের প্রথম দিন আজ। জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলংকময় অধ্যায় রচিত হয় এই মাস। পঁচাত্তরের এই মাস জাতিকে স্তব্দ ও কিংকর্তব্যবিমুড় করে দেয়া নৃশংসতম হত্যাকান্ডের বেদনাবিধুর শোকগাঁথা, রচিত হয়েছিল। হাজার বছরের বাঙ্গালী ও বাঙ্গালী জাতির সার্বজনীন ঐক্যের সর্বশেষ প্রতীক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের জগন্যতম কালো অধ্যায় রচনা করেছিল কুলাঙ্গাররা। এক কাতারে শামিল হওয়া বাঙ্গালী জাতির জীবনে বিভক্তির ওব্যার্থ বীজ রোপিত হল বেদনাময় আগষ্টে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিগত চার দশকের যার শেকড়ে বিস্তার লাভ করেছে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র।১৫ আগস্ট জাতীয় শোকের দিন। বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতিও অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। কেননা পঁচাত্তরের এই দিনে আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অশ্রুর প্লাবনে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোকে আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায়। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন। ১৫ আগস্ট শোকার্দ্র বাণী পাঠের দিন, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী।পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা দেশে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে শুনে সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দেন বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ। তবে ৩২ নম্বরের সামনে পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তারা তাকে প্রথমে বাধা দেয় ও পরে হত্যা করে। এছাড়া ওইদিন ৩২ নম্বরের বাড়িতে কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বের বুকে নিন্দিত ও ঘৃণিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ হয়ে আছে। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর বড় সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান তারা।বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিব চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে এগিয়ে চলছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।