পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে শেষ মুহূর্তে আমড়ার বাম্পার ফলন

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে শেষ মৌসুমেও এবছর আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার আমড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভালো ফলনেও আমড়ার উপযুক্ত দাম না মেলায় বরাবরই লাভের মুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলে আমড়ার বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। আমড়ার ভালো ফলনেও এ পর্যন্ত ব্যক্তিগত বা সরকারের চেষ্টায় কোনো হিমাগার গড়ে না ওঠায় আমড়া মৌসুমে চিন্তিত থাকেন দুই সহস্রাধিক আমড়া চাষি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা। এলাকাবাসী জানায়, স্বরূপকাঠির আমড়া দেশব্যাপী বরিশালের আমড়া নামে পরিচিত। আমড়া চাষ এ অঞ্চলের মানুষের অনেক পুরনো পেশা।

উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের বাড়ির সামনে একটি দুইটি আমড়া গাছ রয়েছে। প্রথমে আশির দশকের মাজামাঝি সময় আটঘর কুড়িয়ানাতে বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে সমস্ত উপজেলা ব্যাপী এর প্রসার ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা, জলাবাড়ী, বলদিয়া, দৈহারী, সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে শুরু হয় আমড়া চাষ। বর্তমানে এর পরিধি সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মৌসুমে প্রতিদিন ৮০-৯০ টন আমড়া যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর আমড়া সংরক্ষনের অভাবে প্রতিটি ব্যবসায়ীর অনেক আমড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাদ্র আশ্বিন ও কার্তিক এই তিন মাস আমড়ার ভরা মৌসুম। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ, ট্রাকে করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে এই বরিশালের আমড়া বিক্রির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। চাষিরা আমড়া পেড়ে নৌকায় ভরে ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে আসেন।

আবার কোনো চাষী আগাম আমড়া ক্ষেত বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা আমড়া কিনে ক্যারেট ও বস্তায় ভরে নৌ ও স্থলপথে পাঠান দূরদূরান্তে। সেখান থেকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা আমড়া কিনে ছড়িয়ে দেন সারা দেশে। আটঘর-কুড়িআনার আমড়া চাষী সুজন কুমার রায় জানান, এ বছর আমড়ার ফলন মোটামুটি ভালো। তিনি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় আমড়া পাঠান। মৌসুমের শুরুর দিকে আমড়ায় খুব লোকসান হয়েছে। শেষ সময়ে আমড়ার দাম একটু বেশি। তবে গেল বারের তুলনায় এ বছর আমড়ার দাম কম। তবে শেষ মুহূর্তে আমড়ার দাম বেড়েছে সে অনুযায়ী ফলন পাচ্ছি না। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ি আমরা পাঠাতে হয়।

আমড়া ব্যবসায়ী লিটন সরকার বলেন, বাজারে চাহিদা কম থাকলে ব্যবসায় তখন লোকসান গুনতে হয়। যদি আমড়া সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যেগে কোন হিমাগার গড়ে উঠত তাহলে আমড়া থেকে সবাই লাভবান হত। তিনি বলেন, তারা বস্তা ও ক্যারেট করে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ টন আমড়া রাজধানীতে চালান করেন। প্রতিমন আমড়া তারা ২ হাজার থেকে ২৫ টাকা দরে কেনেন। তারপর সেগুলো আকার ও সাইজ অনুযায়ী বস্তা ভোজাই করে ট্রাকযোগে রাজধানীতে চালান করেন। এক মন আমড়া রাজধানীতে পাঠাতে খরচ পড়ে ২৫০ টাকা বলে জানান তিনি। আটঘর কুড়িয়ানার ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, স্বরূপকাঠি আটঘর-কুড়িয়ানার আমড়ার খ্যাতি দেশজুড়ে।

এখানকার আমড়া বরিশালের আমড়া নামেই পরিচিত। আমড়া চাষে ইউনিয়নের সহস্রাধিক লোক জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা আর হিমাগারের অভাবে আমড়ায় ব্যবসায়ী ও চাষিরা প্রতিবছরই কম-বেশি লোকসান গুণে থাকেন। নেছারাবাদ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা চপল কান্তি নাথ বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে ভৌগলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নেছারাবাদ উপজেলায় ভরা মৌসুম পরবর্তী সময়ও প্রচুর আমড়ার ফলন হয়। সরকারিভাবে আমড়া চাষীদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়া সহ সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে আমড়ার ফলন আরো ভালো হবে। চাষিরা এই বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *