জোসনা পাগলীর জীবন কাহিনী
ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ জনি মিয়া
ফরিদপুর বাসী-জোসনা পাগলীকে চিনে না, এ রকম লোক খুব কমই আছে। বিগত ২০ বছর আগের, টগবগে তরুনী জোসনা পাগলীর মুখে, (৪০) বছর বয়স পার করার ছাপ করে গেছে। সব সময় হাস্য উজ্জল জোসনা সবার কাছে আদরের। রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০/৪০ টা পান খেতে হয়। মুখে পানের পিক লেগেই থাকে। সবাইকে মামা, সম্বোধন করে সে। তেমন কোন টাকা পয়সার চাহিদাও নাই। পেটের ক্ষুদা নিবারনের জন্য যখন যেখানে যা পেলো খেতে বসে গেল ডিম ভাত ছোট মাছের তরকারি, আলু ভর্তা ও ডালের কদর খুব বেশী তার কাছে।
১৯৯৩ সাল থেকে জোসনা বোয়ালমারী কানফোরদি থেকে সতীনের সংসার থেকে, পাগলী হয়েই ফরিদপুর শহরে আসে। সেই থেকে এখনও আছে। জোসনা, শহরের ২৫ বছরের পাগলী জীবনে, পথে ঘাটে, ফুট পথে, বিভিন্ন অফিস আদালতের বারন্দায় রাত কাটালেও শহরের কিছু নামধারী ভদ্রলোক ও নরপশু এবং পিশাচে তার পিছু ছাড়েনি। জোসনা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হসপিটাল, ভিবিন্ন জনের সন্তানের চাহিদায় অনেক ক্লিনিকেও সে এ পর্যন্ত ১০ ছেলের গর্ভজাত মা হয়ে সন্তান প্রসব করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূএমতে জানা যায়।
তার গর্ভের বেশীরভাগ সন্তানরাই,লাখপতি ও কোটিপতি নিঃস্ন্তান, পালক মা বাবার ঘরের আদরের সন্তান হয়ে বেশীর ভাগই বিদেশে আছে। রাজপুএের মত চেহারা নিয়ে পাগলী জোসনার গর্ভে ৯ মাসের বেশি সময় তার রক্ত পানি খেয়ে ভুমিস্ট হলেও জোসনা যেমন সন্তানের মুখে একফেটা দুধ দিতে পারেনি, তেমনি ভুমিষ্ট সন্তানরাও মায়ের মুখটাওএক মিনিটও দেখতে পারনি। কাঙ্ক্ষিত নিঃসন্তান, মা বাবা আতুর অবস্হাতেই তাদের দামী তোয়ালে পেঁচিয়েছ নিয়ে চম্পট দিয়েছে, অনেকে জানার আগেই।
এই ২৫ বছর পার হয়েছে জোসনার জীবন থেকে এই ফরিদপুর শহর সহ একাধীক শহরতলীতে। সন্তান কে, নিলে, কেন নিলো, জঠর যন্ত্রনার কোন হায়হুতাশ বা, সন্তানের জন্য মায়ের টান, কোন কিছুতেই কাবু করতে পারনি জোসনাকে। তিন ধরনের জর্দ্দা দিয়ে,খয়ের খাঁচা সুপারির সহ একটা পান হাতে দিলেই২/৩ মিনিট কথা বলে তার নিজের ভাষায়। যদি কেউ প্রশ্ন করে জোসনা তোর এ বাচ্চা আসলো কিভাবে, কে কি, করছে, তাদের নাম বলো, তো।
তার মুখে একটাই ভাষা ঐ মামারাই দেয়, আবার কারা যেন নিয়ে যায়। প্রশ্ন করা হলো, তোর মায়া লাগে, না? উওর মিলে আবারও তো হবে। কথা বলিস কেন, শালা, চুপ বলেই আপন মনে দৌড় দিয়ে স্হান ত্যাগ করে। মুখে সব সময় আবাল তাবোল কথা লেগে থাকলেও প্রকৃতির সারায় ওকে কখনও খুব বিশ্রী অবস্হায় তেমন একটা দেখা যায়নি। জোসনা পাগলী বর্তমানে শহরের ভাটীলক্ষীপুর ও বেলতলা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ীর বারান্দা অথবা ভাঙ্গারাস্তার মোড়ে রাত কাটায়। যে, যার ইচ্ছামত, খাবার ও পড়নের খাপ দিয়ে ও সাহায্য করে জোসনা পাগলীকে।
এক অনুসন্ধানে, জানা গেল,এ যাবৎকালে জোসনার গর্ভে জন্ম নেওয়া ৮ ছেলে, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, কানাডা, লন্ডন, ইটালি, সিঙ্গাপুরের প্রবাসী সিটিজেন। পালক, মা, বাবার কাছেই থাকে। জোসনার সন্তানরা এখন প্লেনে আসে প্লেনে যায়। দুই সন্তান ঢাকায়। পাগলী জোসনা এখনও গুমায় মানুষের বাসা বাড়ীর বারান্দায় আর গাছতলায়।
এ লেখুনীতে যদি পথে পরা পাগলীদের যত্ন ও চিকিৎসা ব্যবস্হায় সরকার অথবা কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি এগিয়ে আসেন, সেটাও মসজিদ মন্দির গড়ার চেয়ে কম কিসের।