গৌরীপুরে মাদকের নেশায় ছারখার পরিবার ঢাবির মেধাবী ছাত্র এখন-মেন্টাল হামিদ


তার পুরো নাম মো. আব্দুল হামিদ। বড় হয়েছেন বেশ আদরে। ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। মেধাবী ছেলেটি পরিবারের স্বপ পূরণের পথেই হাঁটছিল। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে বড় কিছু হবেন। মেধাবী আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৪-৮৫ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। শুধু তাই নয়, তিনি উপজেলায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। এসএসসিতেও প্রথম বিভাগ (স্টার মার্ক) পেয়ে বোর্ডের শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন ১৯৮২ সালে। পরে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।
সেখান থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন এবং লাভ করেন শিক্ষাবৃত্তি। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফিতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালেই পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ও ভাইদের কর্মসংস্থানের জন্য ‘মা মৎস্য ফিসারিজ’ পুকুর খননের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ভাইয়েরা তাকে ভুল বোঝেন। জমি নিয়ে বিভেদের জেরে নানা অজুহাতে তার উপরে নেমে আসে অত্যাচার-নির্যাতন। হঠাৎ মাদকের নেশা পেয়ে বসে তাকে। সেই ‘মাদকঝড়ে’ সম্ভাবনার সব পথ হারিয়ে ফেলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাটা তার পক্ষে আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। হয়নি বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ। এখন পাগলের মতো অসংলগ্ন আচরণ করেন হামিদ।
বিয়ে করলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে এ আশায় তাকে বিয়ে করালেও তিনি এখন ছন্নছাড়া জীবনযাপন করছেন। তিনি এখন এলাকায় ‘মেন্টাল হামিদ পাগলা’ নামেই পরিচিত। পরিবারের খোঁজ রাখার সময় নেই তার। তিনি চলেন আপন মনে। অসংলগ্ন আচরণের কারণে এলাকাবাসী তাকে পাগল বলেই চেনেন। শত চেষ্টা করেও তাকে নেশা থেকে ফেরাতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। আর এই সুযোগে তার জমি দখলে নিয়েছেন অন্য ভাইয়েরা।
সহায়-সম্বল হারিয়ে ভবঘুরে এই মেধাবী ছেলেটি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের মেসিডেঙ্গি গ্রামের এমডি সাবুদ আলীর ছেলে তিনি। আব্দুল হামিদ আফসোস করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে যারা পড়াশোনা করতো ওরা তো এখন কেউ সচিব, ব্যারিস্টার, এমপি-মন্ত্রীও হয়েছে। যাদেরকে হলে সিট দিলাম, ওদের অনেকেই এখন দেশের পদস্থ কর্মকর্তা। আর আমারে লোকজন মেন্টাল হামিদ পাগলা বলে ডাকে। বহুবার নেশা ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কয়েকবার ছেড়েও দিয়েছে। কিন্তু শেষমেশ আর ছাড়তে পারি নাই। আমার মাথাটা এখন ঠিক নাই, চিকিৎসা দরকার। নেশা শুধু আমারে খাইছে না; আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। স্ত্রী-সন্তান, ছোট বোন, মা কারো জন্যই তো কিছু করতে পারলাম না। মাদকের নেশায় ছারখার হয়ে গেছে আমার পরিবার।