নড়াইলে ৮ মাসের অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে স্কুল শিক্ষক স্বামী

অন্ত:সত্ত্বা
 তৃতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলতে বাধা দেয়ায় প্রথম স্ত্রী ৮ মাসের অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন স্কুল শিক্ষক স্বামী শাহান শাহ সরদার। স্বামীর অমানবিক নির্যাতন ও আঘাতের চিহ্ন নিয়ে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন ফারজানা বেগম (৩৪)।
বর্তমানে নির্যাতিত ওই নারী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামে। স্বামী শাহান শাহ সরদার একমাস আগে তার এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন।
এটি তার তৃতীয় বিয়ে। তার পিতার নাম সবদার সরদার। জানা গেছে, মাইজপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামের সবদার সরদারের ছেলে মাইজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক শাহান শাহ সরদারের সাথে ২১ বছর আগে ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার আব্দুল কাদিরের মেয়ে ফারজানার সাথে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে শাহজাদী মারিয়া এইচ এস সি, মেঝো মেয়ে শাহ আফরিন ৯ম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে ফাতেমা ৩য় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। বর্তমানে নির্যাতিত ওই নারী ৮মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফারজানা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি তথ্য জানতে পারি। যেহেতু বিয়ে করেছি সে কারণে সব মুখ বন্ধ করেই সহ্য করে এসেছি। বিয়ের ৪/৫ বছর পর অর্থাৎ ২০০৫ সালে পলি নামে এক মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। পরবর্তীতে পরিবার ও আমার অনুরোধে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সংসারে কিছুটা শান্তি ছিলো।
কিন্তু মাঝে মধ্যেই নারী ঘটিত বিভিন্ন অভিযোগ শুনলেও সেগুলি সেহ্য করেছি। সর্বশেষ এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মাইজপাড়া ইউনিয়নের কল্যানখালী গ্রামে তার এক ছাত্রী মারিয়াকে তৃতীয় বিয়ে করে। গত ৬মার্চ রাত সাড়ে ৭টার দিকে তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং ঘরে তুলতে যায়। তখন বাধা দেয়ায় আমার স্বামী শাহানশাহ সরদার, তার তৃতীয় স্ত্রী মারিয়া ও আমার শুশুর সবদার সরদার মিলে আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। আমাকে কিল ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। তখন আমার মেয়েরা ঠেকাতে গেলেও তারাও রক্ষা পায়নি। আমার গর্ভে ৮ মাসের সন্তান রয়েছে। পেটে লাথি মারায় ব্লাডিং হয়। অমানবিক নির্যাতনের কারণে আমি অচেতন হয়ে যাই। নির্যাতিতার মেজো মেয়ে মেয়ে শাহ আফরিন বলেন, আমার মাকে মারপিটের পর প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। আমরা তিনবোন এ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়ে রাতে আমার মাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরী বিভাগে ডাক্তার দেখানোর পর অবস্থায় খারাপ হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে।
আমরা রাত ২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। বর্তমানে চিকিৎসা চলছে। মেয়ে আফরিন আরো বলেন, এ ঘটনার পর আমাদের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আমার বাবা। আমরা এখন কোথায় উঠবো ভেবে পাচ্ছি না। তাছাড়া নানাভাবে আমাদের হুমকী ধামকি দিচ্ছেন।
’ আমার বাবা হলেও তিনি অপরাধী। এ পর্যন্ত আমার বাবার দ্বারা অন্তত ২৫ জন নারী কলঙ্কিত হয়েছে। আমরা সঠিক বিচার চাই। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক শাহান শাহ সরদার মোবাইল ফোনে বলেন, আমি তৃতীয় বিয়ে করায় আমার প্রথম স্ত্রী পরিকল্পিতভাবে এসব করেছে। এটি আপনার তৃতীয় স্ত্রী মেয়েদের ঘরে উঠতে দিচ্ছেন না এমন প্রশ্ন করলে তিনি ফোন কেটে দেন। নড়াইল সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন (পিপিএম) বলেন, এব্যাপারে থানায় কোন অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Aa


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *