ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পনের বছেরেও চালু হয়নি ওটি,এসি-ব্যবহার করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় পনের-বছরেও চালু হয়নি অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। যদিও সেখানে বিভিন্ন যন্ত্রের পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছিল দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি)। ওটির জন্য বরাদ্দ সেই এসি লাগানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা,ডা.নূরুল হুদা খানের কক্ষে। ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর ৩১ শয্যার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনতলা নতুন ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগ, ইপিআই, যক্ষ্ণা ও ওষুধ বিতরণের কাজ করা হয়। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দুটি অপারেশন থিয়েটার। তৃতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ড ও কেবিন। নতুন দুটি ওটিতে তখন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ সবকিছুই দেওয়া হয়।
একটি ওটি ব্যবহার করছে পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগ। কিন্তু অবেদনবিদ না থাকায় অন্য ওটি দীর্ঘ প্রায় পনের-বছরেও চালু হয়নি। গত বছরের ১ জানুয়ারি এই কমপ্লেক্সে টিএইচও (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে যোগ দেন ডা. নূরুল হুদা খান। তিনি যোগ দেওয়ার সাত মাস আগে এই ওটিতে স্থাপন করা এসি দুটি খুলে নিয়ে যান। এর একটি স্থাপন করা হয় নিজের কক্ষে, অন্যটি লাগানো হয় এক মেডিকেল অফিসারের কক্ষে। অভিযোগ, টিএইচও নিজের অফিসকক্ষে বসে রোগী দেখেন এবং ব্যক্তিগত প্যাডে ব্যবস্থাপত্র দেন। যদিও বিধান অনুযায়ী সরকারি টিকিটেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী দেখার কথা। তা ছাড়া তার অফিসকক্ষের দরজায় লাগানো হয়েছে রেডলাইট-যার কারণে সাধারণ মানুষজন তার কাছে যেতে উৎসাহ বোধ করে না।
এসি ব্যবহারসংক্রান্ত অভিযোগ প্রসঙ্গে টিএইচও ডা. হুদা বলেন, হাসপাতালের জিনিস হাসপাতালেই রয়েছে। ওটিতে এসিগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে এবং সচল রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে অন্য এসিটি বিকলই রয়ে গেছে। অপারেশন থিয়েটার চালু হলে সেটি প্রতিস্থাপন করা হবে। তিনি জানান, সভা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে কথা বলার জন্য রেডলাইট-লাগানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য পজিটিভ। হলরুম ভাড়া :গত ৩ থেকে ৫ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হলরুমে এনজিও সংস্থা ‘সুশিলন’ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের প্রশিক্ষণ দেয়।
এ সময় এনজিওটির কাছ থেকে হলরুমের ভাড়া বাবদ প্রতিদিন এক হাজার করে তিন দিনে তিন হাজার টাকা নেন টিএইচও। যদিও রুম ভাড়া দেওয়ার নিয়ম নেই। বিষয়টি স্বীকার করে টিএইচও ডা. হুদা বলেন, টাকা দিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। উন্নয়ন কাজে নয়ছয় :২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা সংস্কার ও ছাদের কাজ, বহির্বিভাগের সংস্কার, তৃতীয় শ্রেণি ও মেডিকেল অফিসার কোয়ার্টার সংস্কারের জন্য অন্তত ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ, ভবন সংস্কারের কাজ ঠিকমতো ও পুরোপুরি না করিয়ে টিএইচওর বাসভবনে টাইলস স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ করানো হয়েছে। যদিও সংস্কার প্রকল্পের শিডিউলে টিএইচওর বাসভবনে টাইলস স্থাপন ইত্যাদি কাজ ছিল না।
এ প্রসঙ্গে টিএইচও জানান, সংশ্নিষ্টদের অসম্পূর্ণ সংস্কারকাজ সম্পন্ন করে দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের উপসহকারী প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র দাস বলেন, অনেক সময় প্রয়োজন অনুযায়ী শিডিউলের বাইরেও কাজ করতে হয়। আর কাজের মেয়াদ চলে গেলেও ঠিকাদারকে অসমাপ্ত কাজ করে দেওয়ার জন্য বলা হবে। ২০০ টাকায় খাসির মাংস :চিকিৎসাধীন রোগীদের তিন বেলা ডায়েটের জন্য সরকারিভাবে আট হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শিডিউল আহ্বান করে। চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিডিউল জমা দেয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দর হচ্ছে প্রায় এক হাজার ২৬৮ টাকা। ওই টাকায় তিন বেলা খাবার দেওয়ার বিবরণী দিতে গিয়ে ২০০ টাকা কেজি দরে খাসির মাংস সরবরাহ করার কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি; যা অনুমোদন করে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠান টিএইচও।
এ প্রসঙ্গে টিএইচও নূরুল হুদা বলেন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ দর থাকায় খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করতে হতো। এতে কার্যক্রম ব্যাহত হতো এবং জনস্বার্থেও বিঘ্ন ঘটত। তাই শিডিউল জমা দেওয়া প্রতিষ্ঠানকে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে বলা হয়। পরে তা অনুমোদনের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সরকারি গাড়ির অপব্যবহার :টিএইচও ডা. নূরুল হুদা খানের পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। প্রতি শুক্রবার কেন্দুয়ার আল-মন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাইভেট চেম্বার করেন তিনি।
সরকারি গাড়ি নিয়ে এভাবে ব্যক্তিগত কারণে যাতায়াত ও ভ্রমণ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে টিএইচও জানান, ঊর্ধ্বতনের অনুমতিক্রমে নিজ খরচে সরকারি গাড়ি নেওয়া যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে তিনি নিজের মাকে নিয়মিত দেখতে যান। কর্মস্থলে ফেরার আগে প্রাইভেট চেম্বার করে আসেন। ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ওটির এসি বিকল থাকলে সেগুলো মেরামত করে হাসপাতালের ভেতর ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সরকারি হলরুম ভাড়া দেওয়ার সিস্টেম আমার জানা নেই। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে কর্ম এলাকার বাইরে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখারও সুযোগ নেই।