সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী নজিবুল্লাহর ময়না তদন্ত শেষে দাফন নড়াইলের মিরাপাড়া গ্রামে সম্পন্ন।

পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামের কেরামত শেখের ছেলে নজিবুল্লাহর (২২) ময়না তদন্ত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নড়াইল সদর হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে।এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নজিবুল্লাহর লাশ সাড়ে তিনমাস পর সৌদি আরব থেকে নড়াইলে এসে পৌঁছায়।ময়না তদন্ত শেষে এদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।পরিবারের উপার্জনক্ষম যুবক নজিবুল্লাহর মৃত্যুতে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্বজনরা।

সংসারের হাল ধরা ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন।সন্তান হারানোর শোক কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসীর দাবি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। সূত্রে জানা যায়, নজিবুল্লাহকে ভালো বেতনে চাকুরির প্রলোভন দিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করাসহ তাকে হত্যার অভিযোগ তুলেছেন পিতা কেরামত শেখ।ঘটনা উল্লেখ করে এক নারীসহ তিনজনের নাম উল্লেখ পূর্বক নড়াইল সদর আমলী আদালতে গত ১২ জুন অভিযোগ দায়ের করেন নজিবুল্লাহ’র পিতা কেরামত শেখ।আদালতের আদেশে গত ১৪ জুন নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ মামলার এজাহারভূক্ত আসামি শাহাবুদ্দিন মিনাকে গত ১৬ জুন গ্রেফতার করে।বর্তমানে এ মামলার আসামীরা জামিনে আছেন। নিহতের স্বজন ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে এবং জীবনে সাফল্য লাভের আশায় নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামের কেরামত শেখের ছেলে নজিবুল্লাহ চলতি বছরের ১৭মার্চ সৌদি আরবে যান।

ভালো বেতনে কাজের সন্ধানে গিয়ে আড়াই মাসের মাথায় লাশ হন তিনি। নজিবুল্লাহকে বিদেশ পাঠাতে তিন দফায় দালাল চক্রের হাতে সাড়ে ৭লাখ টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন গরীব পিতা কেরামত শেখ। জানা গেছে,নড়াইল সদর উপজেলার মিরাপাড়া গ্রামের জলিল মিনার ছেলে শাহাবুদ্দিন মিনা বাদী কেরামত শেখের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই হওয়ার সুবাদে তিনি ছেলে নজিবুল্লাহকে ৬লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠানোর মৌখিক চুক্তি করেন। শাহাবুদ্দিন মিনার ভগ্নিপতি নড়াইল সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের সাইফুল আব্দার সৌদি আরবে কর্মরত।কেরামত শেখ ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর লক্ষ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাইফুল আব্দারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও সাইফুলের শ্যালক (রাবেয়ার চাচাতো ভাই) আমিনুর মিনার কাছে প্রথম দফায় ৩লাখ টাকা প্রদান করেন।গত ১মার্চ রাবেয়া ও আমিনুরের কাছে আরো ৩লাখ টাকা প্রদান করেন কেরামত শেখ। মোট ৬লাখ টাকা প্রদানের পর গত ১৭মার্চ নজিবুল্লাহ সৌদি আরবে পৌঁছান।

পরবর্তীতে নজিবুল্লাহর কাগজপত্র (আকামা) ঠিক করে দেয়ার কথা বলে এবং সৌদি পুলিশের ভয় দেখিয়ে কেরামত শেখের কাছে আরো দেড়লাখ টাকা দাবি করেন শাহাবুদ্দিন মিনা।গরু বিক্রি করে ও ধার-দেনা করে দাবিকৃত দেড়লাখ টাকা প্রদান করেন কেরামত শেখ।গত ৪জুন বাদী কেরামত শেখ সৌদি আরবে অবস্থানরত অন্যলোকের মাধ্যমে জানতে পারেন তার পুত্র নজিবুল্লাহকে আটক রেখে এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা মুক্তিপণ আদায় করেছে এবং ছেলের মৃতদেহ সৌদি আরবের হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে।নজিবুল্লাহর বাবা-মা কখনো ভাবতে পারেননি প্রবাসে গিয়ে উপার্জনক্ষম ছেলে লাশ হয়ে বাড়িতে ফেরবে। তার মৃত্যুর খবরের পর থেকে ছেলেকে শেষবারের মতো দেখার জন্য প্রহর গুনতে থাকেন নজিবুল্লাহর বাবা-মা।আদৌ ছেলের লাশ দেশে আনতে পারবেন কিনা সে বিষয়েও সংশয়ে ছিলেন তারা।বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা ও চেষ্টায় লাশ বাড়িতে আনতে পারায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নজিবুল্লাহর বাবা-মা ও স্বজনরা।

পাশাপাশি নজিবুল্লাহকে বিদেশে নিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা ও শেষমেষ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন জানান,নজিবুল্লাহর লাশ নড়াইলে আসার পর সুরতহালসহ ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *