বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) কৃষি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি ২৫।। দীর্ঘ পড়াশোনা শেষে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট আনতে। ইচ্ছা ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে পরিবারের হাল ধরবেন তিনি। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিল আফসানার প্রান।

রবিবার (১৯ মার্চ) ভোরে গোপালগঞ্জের পুলিশ লাইন থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন তিনি ।পথিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় পঞ্চাশ ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান আফসানা মিমি।

নিহত আফসানা গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়া এলাকার হিরাবাড়ি রোডের মৃত আবু হেনা মোস্তফা নীল সর্দারের মেয়ে। আফসানার এই মৃত্যুর খবরে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ পরিবারের সবাই। জানা গেছে,আফসানার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, ছোটবেলায় তিনি মারা যান। দুই বোনের মধ্যে আফসানা বড়।

ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নিহত আফসানা গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বশেমুরবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। কৃষি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিএইউ তে স্নাতকোত্তরের জন্য ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে আজ সার্টিফিকেট আনতে যাচ্ছিলেন।

আফসানার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের কেউ। তারা বলছেন সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে আফসানার এখন ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে। এবিষয়ে নিহত আফসানার চাচাতো ভাই এ্যড এস আর রহমান জানান ,আফসানা পরিবারের বড় মেয়ে। ইচ্ছা ছিল বিসিএস পরীক্ষা দেবে তাই নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট আনতে সকালে গোপালগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্য রওনা হন। ময়মনসিংহের যাওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ থেকে সরাসরি কোন গাড়ি না থাকায় ঢাকার একটি বাসে ওঠেন। পথিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় পঞ্চাশ ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান আফসানা মিমি।

তিনি আরো জানান, আফসানার লাশ সনাক্ত হয়েছে। আমাদের কাছে হস্তান্তর করলে লাশ নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরবো। মেয়েটি যাচ্ছিলেন সার্টিফিকেট আনতে, এখন ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে। এর আগে রোববার (১৯ মার্চ) সকালে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ২০ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। দুর্ঘটনা নিহতের মধ্যে যাদের পরিচয় সনাক্ত করা গেছে তারা হলো- গোপালগঞ্জের ত্রিনদী রঞ্জন মন্ডল (৫০), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের মোঃ আমজাদ আলীর ছেলে মাসুদ মিয়া (৩২), খুলনার সোনাডাঙ্গার শেখ আহমদ মিয়ার ছেলে শেখ আব্দুল আল মামুন (৪০), গোপালগঞ্জ সদরের মোঃ হেদায়েত মিয়া (৪৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত (ইংরেজি) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার (২০), লোহাগাড়া নড়াইলের বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ হোসেন (৫০), গোপালগঞ্জ সদরের মাসুম মিয়ার ছেলে মোস্তাক শেখ (৪০),গোপালগঞ্জের টুংগীপাড়ার মোঃ কাঞ্চন শেখের ছেলে শেখ কবির হোসেন (৫৫), ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২৪),গোপালগঞ্জ সদরের সজীব (২৬) পিতা- নওশাদ শেখ , এবং ফরিদপুর আলফাডাঙ্গার শহীদ মুরাদ আলির ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল । বাকিদের পরিচয় এখনো সনাক্ত করা যায়নি। শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরিবহন ম্যানেজার সুত্রে জানা গেছে,খুলনা থেকে ছেড়ে আসা বাসটিতে গোপালগঞ্জ থেকে ১৪ জন যাত্রী উঠেছিলেন। তবে তার মধ্যে কতজন মারা গেছে তা জানা যায় নি।