সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম নেই,ঘুরছে দ্বারে দ্বারে

জীবন বাজী রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণে দেশ স্বাধীন করলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কবির খান (৭৫) মোঃ আইয়ুব শেখ (৬৮) ও আইয়ুব আলী মোল্যা।

দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম থাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের আকুতি প্রধানমন্ত্রী যদি একটু সুদৃষ্টি দেন তাহলে জীবনের শেষ বয়সে তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হবে এবং মৃত্যুর আগে নিজেকে শান্তনা দিতে পারবে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের মোঃ কবির খান, মোঃ আইয়ুব আলী শেখ ও আইয়ুব আলী মোল্যা মহান মুক্তিযুদ্ধে বেসরকারি সাব সেক্টর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভারতের থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং উপজেলার ভাটিয়াপাড়া ও ফুকরায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকসেনাদের প্রতিহত ও পরাস্থ করেন।
স্বীকৃতি হিসেবে বিহারের বীরভুমি,৮ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল মন্জুর অধীনে যুদ্ধ কালীন গ্রুপ কমান্ডার আবুল খায়ের মোল্যা কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত হন।

শুধু তাই নয় প্রশাসকের নিকট অস্ত্র ও গুলি জমা দেন। কিন্তু এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। নিজেদের নাম তালিকাভুক্ত করতে ১৯৯৬ সালের পর থেকে একাধিকবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও স্থানীয় ভাবে অনেকের দারস্থ হয়েছেন।

কিন্তু যাচাই-বাছাই কমিটি তাদের তালিকাভুক্ত না করায় আজও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি। আর সেজন্যই মিলছেনা তাদের ভাগ্যে কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কেন নাম তালিকাতে নেই এমন প্রশ্ন করতেই মোঃ কবির উদ্দিন খান কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, নিজের জীবন বাজী রেখে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এখনও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নাম নাই।আমি রাষ্ট্রীয় সম্মানে কেন কবরে যেতে পারবনা।
বর্তমানে তিনি ফুকরা শহীদ মুক্তিযুোদ্ধা স্মৃতি সৌধের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজে ব্যস্তসময় পার করেন। কারন তিনি জানান এখানে আমার সহযোদ্ধা ভাইয়েরা ঘুমিয়ে আছে তাদের সেবা যত্ন করেই আমার সান্ত্বনা। নিজের কোন ছেলে সন্তান নেই বসতি ঘরও জরাজীর্ন্ন অবস্থা।

জীবনের পড়ন্ত সময় এসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মরন করতে গিয়ে আইয়ুব আলী শেখ দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে বলেন- আমরা সেই সব সৌভাগ্যবান মুক্তিযোদ্ধা যারা বেঁচে থেকেছি – স্বাধীন স্বদেশ দেখেছি, এটাইতো জীবনের সবচেয়ে বর পাওয়া।ব্যক্তিগত ভাবে কিছু পাব, সেই লোভে মুক্তি যুদ্ধ করিনি।বেশ ভালো আছি। এখন ভ্যান চালিয়ে ও চটপটি বিক্রি করে সংসার চালাই স্বাধীন রাষ্ট্রে।
নিজের সন্তানদের কাছে পরিচয়ও দিতে পারিনা আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। সম্মুখ সমরে যুদ্ধকরেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি।

এজন্য সরকার প্রধানের নিকট আবেদন আমাদের যুদ্ধকালীন সময়ের সকল প্রমাণপত্র যাচাই করে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

যুদ্ধকালীন সহ যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী এমদাদুর হক বলেন- কবির উদ্দিন খান ও আয়ুব আলি শেখ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আমরা এক সাথেই যুদ্ধ করেছি ভাটিয়াপাড়া ও ফুকড়া সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছি এরা এখন ও সরকারী ভাবে কোন সম্মানি পায় না তিনি সরকারের কাছে গেজেট ভুক্ত করার অনুরোধ জানান

যুদ্ধকালীন সহ যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলি ফকির বলেন – আমরা একই সাথে ট্রেনিং করার পরে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছি, সরকারী গেজেট ও যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান

এদিকে পরিবার পরিজন নিয়ে মানেবতর জীবন যাপন করছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করণ এবং রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধা প্রদানে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তার পরিবার,রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি সহ এলাকাবাসী।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *