যশোরের অভয়নগরে ভিজিডি কর্মসূচির তালিকা প্রণয়নে নীতিমালা উপেক্ষিত
সারাদেশের ন্যায় যশোরের অভয়নগরেও চলমান ভিজিডি কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত ভিজিডি কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে সমাজের অগণিত ভুক্তভোগী অসহায় ও দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর এ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
আর এ কারনে বর্তমান সরকার দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট-ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় নতুন করে প্রকৃত দুঃস্থ্য ও অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে মাসে ত্রিশ কেজি করে চাল বিতরনের জন্য ‘ ভিজিডি চক্র ২০২১-২০২২’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
যা বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ভিজিডি কর্মসূচি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবে। যেখানে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সংযুক্ত করে দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট-ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় ১ জানুয়ারী ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ চক্রের ভিজিডি উপকারভোগী বাছাই/নির্বাচন, ভিজিডি খাদ্য ও কার্ড বিতরণ ও মণিটরিংয়ের নীতিমালা প্রণয়ন করে নীতিমালা ও শর্তাবলী অনুসরনের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। আর এ নীতিমালা ও শর্ত বাস্তবায়নে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা প্রদান পূর্বক বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সারাদেশের ন্যায় যশোরের অভয়নগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নিকটও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) হাওলাদার মোঃ রকিবুল বারী স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পত্রটি গত ১৩ অক্টোবর এসে পৌছেছে। যার স্মারক নং- ৩২.০১.০০০০.০০৮.১২৫.২০.১০৩৩। যেখানে পরিপত্রটি িি.িফধি.মড়া.নফ ওয়েব সাইটে পরিপত্র দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তবে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত দুঃস্থ্য ও অসহায়- হতদরিদ্রদের বাছাই করতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে যে নীতিমালা ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা অভয়নগর উপজেলায় চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে সমন্বয় করে আবেদনের বিষয়, তারিখ ও স্থান উল্লেখপূর্বক গ্রাম পর্যায়ে মাইকং করতে হবে। ভিজিডি শাখা হতে সরবরাহকৃত লিফলেট ভিজিডি এনজিও’র মাধ্যমে গ্রাম/পাড়া/বাজার/ইউনিয়ন পরিষদের দর্শনীয় স্থানে/দেয়ালে আঠা দিয়ে পরপর ৫/১০ টি করে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বহুল প্রচারের জন্য জামে মসজিদে প্রেরণ করা যেতে পারে। নীতিমালা ও নির্দেশনার শুরুর দিকে এ নির্ধেশনা জোরালোভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হলেও অভয়নগরে ভিজিডির সুবিধাভোগীদের খুঁজে বের করতে এর কোনটিই মানা হয়নি। অভয়নগর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত একমাসে উপজেলার কোথাও কোন মাইকিং হয়নি। উপজেলাবাসীর চোখে পড়েনি কোথাও কোন লিফলেট। অভিযোগ উঠেছে, স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান -মেম্বরগণ ভাতাভোগীর সংখ্যা ভাগ করে নিয়ে নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করছে। যেখানে নিজের পছন্দের লোকদেরকেই তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ইউপি মেম্বর ও চেয়ারম্যানদের খুশি করতে হচ্ছে স্ব-স্ব ইউনিয়নের আবেদন প্রত্যাশীদের। এ ক্ষেত্রে কোন কোন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তীদের বলা হয়েছে টাকার বিষয় কাউকে বললে তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া হবে। আর তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার ভয়ে ঘুষ দেয়ার কথা বেমালুম চেপে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। সচেতন মহলের দাবি, অসৎ উদ্দেশ্যেই মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী অভয়নগর উপজেলায় কোন প্রচারণা চালানো হয়নি। আর এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও নেয়া হয়নি যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের প্রবেশদ্বারে নামমাত্র একটি ব্যানার টানিয়ে নিজেদের দায় সেরেছেন বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিকাশ কপিল রায়ের সাথে কথা বললে তিনি ইউনিয়নের কোথাও মাইকিং বা লিফলেট প্রচার করা হয়নি বলে স্বীকার করলেও অসৎ উদ্দেশ্য বা ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলার কোথাও এ ব্যাপারে কোন মাইকিং করা হয়নি। লিফলেটও বিতরন করা হয়নি। মেম্বররা স্ব-স্ব এলাকা থেকে তালিকা সংগ্রহ করে অনলাইনে আবেদন পূরণের ব্যবস্থা করছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মাইকিং না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন প্রত্যেক ইউনিয়নে লিফলেট বিতরন করা হয়েছে। তবে কোথাও লিফলেট লাগানো হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান। এসময় এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলায় একসাথে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে যথাযথভাবে মনিটরিং করা হয়ে ওঠেনি। এদিকে বিষয়টি অভয়নগর উপজেলার সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের উদ্রেগ করছে। সচেতন মহল বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে এবং প্রকৃত দুঃস্থ ও অসহায় দরিদ্রদের খুজে বের করে তালিকাভুক্ত করতে অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেঈন খানের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।