ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অভাবে  চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অভাবে  চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শুন্য রয়েছে। অপরদিকে সার্জারি, মেডিসিন , শিশু, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, নাক কান গলা ও কার্ডিওলজিস্ট, এক কথায় সবগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১৭ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, শয্যা ও চিকিৎসা উপকরণ না থাকায় মানুষ যথা সময়ে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , হাসপাতালে শিশু বিভাগে কোনো চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে এ বিভাগের চিকিৎসা সেবা। ফলে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না শিশুরা। এছাড়াও  হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া না থাকায় অস্ত্রোপচার, সাধারণ ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এখানে গাইনী বিভাগে কোনো চিকিৎসক  না থাকায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিকিৎসা সেবা নিতে রোগীদের দৌড়াতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা জেলা হাসপাতালে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে,  ২৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ১০ জন চিকিৎসক রয়েছে।  বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকের মধ্যে  অর্থোপেডিক ছাড়া বাকী সব পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক সপ্তাহে মাত্র দুদিন এ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন যা সেবা দানে যথেষ্ট নয়। গাইনি, অ্যানেসথেসিয়া না থাকায় সার্জারি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় শিশুদের চিকিৎসা সেবাও বন্ধ। এই পদ গুলোতে চিকিৎসক না থাকার কারনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা মারাত্বক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সেবা কেন্দ্রে  তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকাংশ পদ শূন্য পড়ে রয়েছে।

আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও

করোনা ও ইপিআর নিয়ে কাজ করেন আরও একজন। ডেন্টাল বিভাগ ও আলট্রা বিভাগে ১ জন করে চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। জরুরি বিভাগে কাজ করেন তিনজন চিকিৎসক। বাকী দুই চিকিৎসক আউটডোরে নিয়মিত রোগী দেখেন।  আউটডোরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন অন্যান্য দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা। তাদের উপর বাড়তি চাপ পড়ছে। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিন আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শত শত রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। কর্মরত চিকিৎসকদেরও রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।

ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সোহাগ বলেন, একটা গর্ভবতী স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর জানতে পারি এই বিভাগের চিকিৎসক নেই। ফিরে আবার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি,  সেটা ছিল জীবনের জন্য চরম ঝুঁকির বলে তিনি  অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে হাসপাতাল গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা হালিমা খাতুন  (৪৫) বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে  এসেছি সকাল ৯টায়, ১২ টা পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর ডাক্তাররদেখাতে পেরেছি।’

তাপসী রানী তাঁর দুই বছরের শিশু সন্তানকে হাসপাতালে থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল আমিন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপে একটিও বেড ও কেবিন খালি নেই।  স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে। আর জরুরী বিভাগে চলছে নন স্টপ সার্ভিস।

তিনি আরো বলেন,  ‘উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে  শুন্য পদে  জনবল নিয়োগ সহ হাসপাতালটি ৫০ বেড থেকে উন্নীত করে একশত বেডে নেয়া জরুরী।   জনবলের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি ইতিমধ্যে লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *