ভালবাসার বৌ হারিয়ে মানষিক ভারসাম্যহীন বাবু

বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না দুরেও ঠেলে দেয়। শরৎ চট্টোপাধ্যায়ের যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এই উক্তি যেন সত্য হলো গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চাপতা গ্রামের সোহেল রানা বিশ্বাস বাবুর জিবনে। ভালবাসার মানুষ ছেড়ে চলে যাওয়ায় মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে হুইল চেয়ারে স্থবির হয়ে গেছে সোহেল রানা বিশ্বাস বাবুর জীবন ।

এক সময়ের সুদর্শন এই যুবক ৩ বছর প্রেমের পর ভালোবেসে ২০০৮ সালে বিয়ে করেছিলেন ভোলা সদরের শিউলি আক্তার মিম নামে একজনকে। ১০ বছর সংসারও করেছেন তারা। ৮ বছর বয়সী একটি মেয়েও আছে তাদের সংসারে। কিন্তু ২০১৮ সালে অভাবের অযুহাত দেখিয়ে মেয়েকে দেখিয়ে সোহেল রানা বাবু কে ছেড়ে চলে যায় তার ভালবাসার বৌ। বিষয়টি বাবু মেনে নিতে না পেরে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর আক্রান্ত হন ডিস্কাইনেসিয়া নামক বিরল রোগে। টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পেরে বর্তমানে বাড়িতেই আছেন বাবু।

সোহেল রানা বিশ্বাস বাবু উপজেলার ওরাকান্দী ইউনিয়নের খাগড়াবাড়ি গ্রামের জিয়াউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। ২০০৭ সালে মারা যায় বাবুর বাবা।

পিতা হারা সোহেল রানা বাবুর সংসার চলছে বিধবা মায়ের উপার্জনে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান তা দিয়েই চলে মা ছেলের সংসার। জাতীয় মানষিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিউট হাসপাতাল থেকে দুই মাসের ওষুধ নিয়ে এসেছিলেন বাবুর মা সুফিয়া বেগম।নুন আনতে পানতা ফুরানো সংসারে সব ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় ছেলের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত মা সুফিয়া ।
সোহেল রানা বিশ্বাস বাবুর বর্তমানে বিছানায় সময় কাটে মোবাইলে মেয়ের ছবি দেখে। মানষিক ভারসাম্য হারালেও ভোলেনি মেয়ের কথা। তাইতো এক নজর দেখার খুব ইচ্ছা তার। সোহেল রানা বিশ্বাস বাবুর চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছে বাবু মা ও তার এলাকাবাসী।

 

বাবুর মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে একসময় খুব ভালো ছিল। ২০০৮ সালে বিয়ে করেছিল ভোলা সদরের শিউলি আক্তার মিম নামে একজনকে। ১০ বছর সংসারও করেছেন তারা। ৮ বছর বয়সী একটি মেয়েও আছে তাদের সংসারে। কিন্তু ২০১৮ সালে অভাবের অযুহাত দেখিয়ে মেয়েকে দেখিয়ে আমার ছেলে কে রেখে চলে যায় আমার ছেলের স্ত্রী। এরপর আমার ছেলে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ ঘরে পড়ে যায়। এতোদিন ধরে আমি ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে আসছি। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে কাজ করি। যা পাই তা দিয়েই চলে আমাদের মা ছেলের সংসার। জাতীয় মানষিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিউট হাসপাতাল থেকে দুই মাসের ওষুধ নিয়ে আসছিলাম সব শেষ হয়ে গেছে। অর্থভাবে ছেলের ওষুদ কিনতে পারছি না। আমি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।

বাবুর প্রতিবেশী আমিনুর বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ছেলের চিকিৎসার খরচ চালিয়ে আসছে বাবুর মা। তাও অন্যের বাড়িতে কাজ করে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে ঠিক মত সংসারই চলে না চিকিৎসা করাবেন কি করে। সকলের কাছে একটাই অনুরোধ বাবুর চিকিৎসার জন্য সকলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক। ভাল চিকিৎসা পেলে হয়তো বাবু আবারও সুস্থ জিবনে ফিরে আসতে পারে।

গোপালগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হারুন অর রশীদ বলেন, বাবুর ঘটনাটি শুনে খুবই খারাপ লেগেছে। বাবুর পরিবার আবেদন করলে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তার চিকিৎসার জন্য নিয়মঅনুযায়ী সাহায্য করা হবে।

রাতইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঞ্জুরুল ইসলাম আঞ্জু বলেন, সোহেল রানা বিশ্বাস বাবুর মাকে প্রায় সাময়িক সহযোগিতা করি। তাদের বিষয়টি নজরে আছে আমাদের। আমার ইউপির পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমি চেষ্টা করবো তাকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহোযোগিতা করার।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *