প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ১৩, ২০২৫, ১:৪০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১২, ২০২০, ৫:১৮ অপরাহ্ণ
বোরহান উদ্দিন চৌধুরী টোটন লেখক: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সমবায় সম্পাদক
।
গোপালগঞ্জের আড়পাড়া মুন্সিবাড়ির ছেলে আমি। আমাদের বাড়ির বয়স ১১৫ বছর।এই বাড়ির মালিক ছিলেন আমার তিন দাদা মরহুম চৌধুরী হাজী ইসমাইল মুন্সি,মরহুম চৌধুরী আব্দুল মজিদ মুন্সি ও আমার ছোট দাদা মরহুম চৌধুরী আব্দুল হামিদ মুন্সি।গোপালগঞ্জের মুসলিম জমিদার ছিলেন আমার দাদারাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেকবার এসেছিলেন এই বাড়িতে আমার দাদাদের সাথে দেখা করতে। আমার দাদারাও অনেক পছন্দ করতেন বঙ্গবন্ধুকে এবং সহযোগিতা করতেন যেকোন ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধুও অনেক সম্মান করতেন আমার দাদাদের। আমার ছোট ফুফু মিস খাতুন (মিসি ফুফু) কে বঙ্গবন্ধু নিজের চাচাতো ভাই শেখ নান্না মিয়ার সাথে বিয়ে দেন। আমার ফুপুর শ্বশুরের নাম মরহুম শেখ আব্দুল মান্নাফ (পনুমিয়া) যিনি বঙ্গবন্ধুর লাশ শনাক্ত ও গ্রহণকারী ছিলেন।
আমার বড় চাচা মরহুম চৌধুরী আব্দুর রাজ্জাক মুন্সীকে বঙ্গবন্ধু দাদা সম্বোধন করতেন। আমার নোয়া চাচা মরহুম চৌধুরি আলাউদ্দিন মুন্সি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং গোপালগঞ্জের হরিদাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন। আমার আরেক চাচা আব্বার ফুপাতো ভাই মরহুম হেমায়েত উদ্দিন মুন্সি আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় খোকা কাকা বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন এবং কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে একই সঙ্গে পড়ালেখা করতেন। আমার আব্বা মরহুম আবুল হোসেন চৌধুরী (রাঙামিয়া) ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুবই আদরের ছোট ভাই। শহীদ শেখ আবু নাসের কাকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৪ ই আগস্ট শহীদ শেখ আবু নাসের কাকা ও আমার আব্বা বঙ্গবন্ধুর সাথে বিকেলের নাস্তা করেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে।
আমার আব্বা ভাগ্যক্রমে আমার অসুস্থতার কারণে বাসায় চলে এসে প্রাণে বেঁচে যান ১৫ ই আগস্ট এর জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে।যদিও বঙ্গবন্ধু অনেকবার আব্বাকে বলেছিলেন রাঙ্গামিয়া রাতে থাক, অনেকদিন তুই আসিস না রাতে গল্প করবো সকালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে আমার প্রোগ্রাম আছে তুই আর নাসের আমার সাথে যাবি। আমার অনেক জ্বর থাকায় আব্বা বলেছিলেন ভাইজান আমার ছেলেটার অনেক জ্বর আমি ভোর বেলায় চলে আসব এবং আপনার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যাবো। আব্বা বাসায় চলে আসেন- বেঁচে যান প্রাণে, আর কোন দিন যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সাথে কোন অনুষ্ঠানে।ভোরবেলায় গোসল শেষ করে রেডিও অন করে শুনতে পেল বঙ্গবন্ধু আর নেই, সব শেষ হয়ে গেছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় মাটিতে, আমার আব্বার আর কোনদিন যাওয়া হয়নি ৩২ নম্বরে, দেখা হয়নি বঙ্গবন্ধুর সাথে, তার ভাবির সাথে,বন্ধু আবু নাসের কাকার সাথে, আব্বার খুব প্রিয় ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ভাইয়ের সাথে, শেখ জামাল ভাই,শেখ কামাল ভাই এর সাথে,শেখ রাসেলের সাথে, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এর সাথে।
বঙ্গবন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব ছিল আমার মরহুম চাচা চৌধুরী বাদশা মিয়ার সাথেও। আদর করতেন আমার মরহুম চাচা এডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই নান্নু, ও আমার ছোট চাচা চৌধুরী আহাদুজ্জামান কে। বঙ্গবন্ধু আদর করতেন আমার মরহুমা হালিমা ফুপু কে আমার ফুফা ছিলেন মরহুম অ্যাডভোকেট কাজী আবদুর রশিদ গোপালগঞ্জ ১ আসনের বারংবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।এক কথায় আমাদের পরিবারের সকলের সাথেই বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হবার পর আমার দাদার সাথে সাথে দেখা করেন, দোয়া চান এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে কিছু একটা চাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেন, আমার দাদা বললেন বাবা আমার কোন কিছুর অভাব নেই তুমি আজ মন্ত্রী হয়েছে একদিন এই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হবে তোমাকে আমি দোয়া করলাম।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু কিছুতেই দাদাকে ছাড়লেন না বললেন আপনাকে কিছু একটা চাইতেই হবে, এরপর আমার দাদা বললেন আমি একটা জিনিস চাইবো তুমি দিবে বঙ্গবন্ধুর উত্তর দিলেন হ্যাঁ অবশ্যই দিব আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে। দাদা বললেন আমরা হজ করে এসেছি আমরা দেখেছি বাংলাদেশের হাজিদের কত কষ্ট হয় ইন্ডিয়া হয় জাহাজে করে হজ করার সময়, তুমি যদি চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের হাজীদের জন্য একটি হজ জাহাজ চালু করো এটাই তোমার কাছে আমার চাওয়া। বঙ্গবন্ধু রাজি হন এবং হিজবুল বাহার নামক হজ জাহাজ চালু করেন। আমার দাদারা বাপ-চাচারা নিজেদের জন্য কোনদিনই বঙ্গবন্ধুর কাছে বা অন্য কারো কাছে কিছুই চাননি। আমরাও চাই কিছুই চাইনা।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ যেন বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যেন বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে গিয়ে নিজের ভাগ্য উন্নয়নে যেন ব্যস্ত হয়ে না পড়েন। তবেই সোনার বাংলা হবে। সবাই আমাদের প্রাণপ্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন যেন তিনি দীর্ঘজীবী হোউন। আমার কথা একটাই আমাকে আমার দলের কোনো নেতাকর্মী প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করবেন না। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের লোক।এই দেশের জন্য এবং এই দেশের মানুষের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সামনে শীতকালে আসছে মহামারী করোনার প্রভাব কিছুটা বাড়তে পারে তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন সবসময় মাস্ক পড়ুন, নিজে ভালো থাকুন অন্যকে ভালো রাখুন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত