বিশ্বে করোনায় দুই সপ্তাহে সবচেয়ে কম মৃত্যু

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর অংশ হিসেবে দেশে দেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতালি ও স্পেনের মতো কিছু দেশে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমারও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গত রোববার বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের, যা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, গতকাল সোমবার রাত আটটা পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে ২৪ লাখের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৬ লাখ ৩৭ হাজার।

রোববার বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৮৪ জনের। ৫ এপ্রিলের পর এদিনই সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ মারা গেছেন। ৫ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে মারা যান ৪ হাজার ৭৩৯ জন। এর আগে ১ এপ্রিল মারা যান ৪ হাজার ৮৯০ জন। চলতি এপ্রিল মাসে এ পর্যন্ত শুধু এই তিন দিনই বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজারের কম ছিল। বাকি দিনগুলোয় দৈনিক মৃত্যুহার ৫ হাজারের বেশি ছিল। এদিকে ১৪ এপ্রিল ছিল করোনার সংক্রমণে এ পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন। ওই দিন বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয় ১০ হাজার ৭৬১ জনের।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় এবং করোনার সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী আরেকটি ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, রোববার বিশ্বজুড়ে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭৫ হাজার ৮০৪ জন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো নতুন সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমল। এর আগে শনিবার রোগী শনাক্ত হয় ৮১ হাজার ৯০৬ জন, শুক্রবার শনাক্ত হয় ৮৬ হাজার ৪৯৭ জন এবং বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয় ৯০ হাজার ২৫৪ জন। বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ৩ এপ্রিল সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ৯৬ হাজার ৩১ জন রোগী শনাক্ত হয়।

সিএনএন জানায়, করোনার সংক্রমণে যে দেশগুলোয় এত দিন হিমশিম অবস্থা ছিল, সেগুলোয় এখন নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করেছে। স্পেনে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গতকাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে ২০ হাজার ৮৫২ জনের মৃত্যু হলো। সেখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসাকে ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে অভিহিত করে স্পেনের স্বাস্থ্যগত জরুরি পরিষেবার পরিচালক ফার্নান্দো সাইমন বলেন, ‘সংক্রমণ ও মৃত্যু কমার হার আমাদের আশা দেখাচ্ছে।’ তবে এখনই বাড়ির বাইরে পা রাখার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসে যেকেউ সংক্রমিত হতে পারে। তাই বলে সবাইকে সমানভাবে সংক্রমিত করে না।’

 বিবিসি জানায়, সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে ইতালিতেও। দেশটিতে রোববার মৃত্যু হয়েছে ৪৩৩ জনের। এ নিয়ে মোট মারা গেলেন সাড়ে ২৩ হাজারের বেশি। দেশটিতে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে রোববার রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজারের কিছু বেশি।

রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে রোববার মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৬১ জনের। ১৪ এপ্রিলের পর এদিনই দেশটিতে করোনায় সবচেয়ে কম মানুষের মৃত্যু হলো। ওই দিন মারা গিয়েছিলেন ৬ হাজার ১৮৫ জন। এ ছাড়া রোববার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৮৪৪ জন। ৬ এপ্রিলের পর এদিন সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যমতে, মৃত্যু কমছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যেও। ফ্রান্সে রোববার মারা গেছেন ৩৯৫ জন। আর যুক্তরাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৯৬ জনের। এ ছাড়া গত কয়েক দিনের মধ্যে জার্মানিতেও এদিন মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল, ১০৪ জন।

বিবিসি জানায়, সংক্রমণ ও মৃত্যু কমায় জার্মানিতে বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ছোটখাটো দোকানগুলো খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ এখনই বিধিনিষেধ শিথিল না করার পক্ষে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *