বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভিত রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের মধ্য দিয়ে। দুই দেশের মানুষের ইতিহাস, ভূগোল, ভাবাবেগ, মূল্যবোধ ও স্বার্থের এক অপূর্ব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে এক বিশেষত্ব দান করেছে। সাম্প্রতিক কর্মচাঞ্চল্য এই সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে জনমনে গভীর কৌতূহল ও আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র নেতৃত্বে উন্নয়ন এবং অগ্রগতির পথে চলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপুর্ন এবং দায়িত্ববান রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। 'সবার সংগে বন্ধুত্ব, দ্বেষ নয় কারুর প্রতি'- আওয়ামী লীগ সরকারের এই নীতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি সক্রিয় কূটনীতির পথে চলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এখন বাংলাদেশ এখন একটি দৃশ্যমান পরিচিত বহন করছে। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে আরও বেশি সম্পর্ক তৈরি করা এবং আরও বেশি আঞ্চলিক যোগাযোগ গড়ে তোলার উপরে গুরুত্ব দিয়ে চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার উপরে জোর দিয়েছে। এই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ২,৫৪৫ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত। ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে নিকট সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকার জন্য এই দুই দেশ সব সময়ই প্রতিবেশীর থেকেও কিছুটা বেশি। শুধু সীমান্ত এবং নদী নয়, সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্যও এক এই দুই দেশে। আর এই নৈকট্য আরও নিবিড় হয়েছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার অভিজ্ঞতা এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার সময় থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে উন্নততর জায়গায় গেছে । সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বহুদিন ধরে চলে আসা বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয়য়ের সমাধান, বিশিষ্ট কূটনীতি, দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ সাধন , বিদ্যুৎ এবং শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা এবং বাণিজ্য এবং জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে।অতীতের থেকে আরও অনেক বেশি হারে এখন দু'দেশের মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক ভারতে এসেছিলেন। ঐ বছরে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে দশ লক্ষের বেশি ভিসা মঞ্জুর করা হয়েছিল। ভারত যাত্রার নিশ্চিত টিকিট হাতে কোনও মানুষের এখন ভিসার আবেদন করার জন্য আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়না। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দু'দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও অত্যুচ্চ পর্যায়ে গেছে। ঢাকায় ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার ২০১০ সালে থেকেই নিয়মিত ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। আই সি সি-তে নিয়মিত ভাবে যোগ ব্যায়াম, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত, মনিপুরী নৃত্য, আঁকা এবং হিন্দি ভাষা শিক্ষার পাঠক্রম চালু আছে। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস টেগোর চেয়ারের প্রবর্তন করেছে। ২০১২ সালে থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে একশো তরুণের একটি দল ভারতে ঘুরতে যায়। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের সময় ভারতীয় টেলিভিশনে বাংলাদেশি অনুষ্ঠান দেখানোর জন্য একটি সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।এছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে হতে পারে একে অপরের সম্পূরক, হতে পারে পারস্পরিকভাবে অর্থবহ। একই সঙ্গে দুই দেশই প্রাকৃতিক সম্পদের, বিশেষ করে পানি, জ্বালানি ও জলবায়ুর অংশীদার এবং এই সম্পদের সুষম বণ্টন ও ব্যবহারের মাধ্যমে পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে। এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ও ভারতের আগামী দিনের সম্পর্ক আরো বেশি শক্তিশালি হবে।