প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ১৫, ২০২৫, ১০:১০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১০, ২০২০, ৯:০১ পূর্বাহ্ণ
প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত
স্টাফ রিপোর্টারঃ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর দ্রুত ও সহজ হলেও এই মাধ্যমে দুষ্টু চক্রের হাত পড়েছে। প্রতিদিন সারা দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গিয়ে শত শত মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। আর এর শিকার ব্যক্তিরা বেশির ভাগই শিক্ষিত ও সহজ-সরল প্রকৃতির হওয়ায় লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের কয়েকটি স্থানে প্রতারকচক্রের জাল বিস্তার শনাক্ত করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে টাকা হাতিয়ে নেয়া ওই চক্রটি। যদিও বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহকদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপকে কেন্দ্র করেই মূলত প্রতারণার নানা পদ্ধতি বের করে ফাঁদ পাতছে প্রতারকচক্রটি।
প্রথমত, গ্রাহকের কাছে ফোন করে তথ্য হালনাগাদের কথা বলে পিন নম্বর বা সিকিউরিটি কোড কৌশলে নিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এরপর গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে থাকা সব টাকা খুব সহজেই নিজেদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে নিচ্ছে তারা। গ্রাহক তথ্য হালনাগাদ করতে না চাইলে প্রথম দিকে বড় ধরনের প্রলোভন দেখায়। এতেও যদি কাজ উদ্ধার না হয় তাহলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়ে থাকে। এতে অনেক গ্রাহক হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে পিন নম্বর দিয়ে দিচ্ছে। আর তখনই সর্বনাশ! হয়ে যাচ্ছে ওই গ্রাহকের। এ রকম একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন বেসরকারি একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নাজমুল হাসান। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তার একটি বিকাশ নম্বর আছে। সম্প্রতি ওই নম্বরে একজন ফোন দিয়ে বলে তিনি বিকাশের হেড অফিস থেকে বলছেন। আপনার অ্যাকাউন্টটি নিরাপদ (সিকিউরড) নয়।জরুরি ভিত্তিতে আপনার পিন নম্বর পবির্তন করা জরুরি। এ জন্য আপনার পিন নম্বর প্রয়োজন। নাজমুল হাসান যখন পিন নম্বর দিতে অস্বীকার করলেন তখনই অফারের প্রলোভন দেয়া শুরু করে প্রতারকচক্রটি। একপর্যায়ে লাইন কেটে দেয়ার পরই বিকাশ নম্বরটি বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেয় তারা। তখন উল্টো তাকে হুমকি দেয়া শুরু করলে ওপার থেকে লাইনটি কেটে দিয়ে নম্বরটি বন্ধ করে দেয়।
দ্বিতীয়ত, পিন নম্বর চেয়ে নানা ফাঁদ পাতছে প্রতারকচক্রটি। এটা এখন প্রতারণার করা হয় অন্যতম কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, টার্গেট করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তার আত্মীয়স্বজন পরিচয় দিয়ে প্রতারকরা শিক্ষিত সহজ-সরল মানুষকে প্রতারিত করছে। সম্প্রতি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ১০ হাজার টাকা খুইয়েছেন বিচার বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, তার শ্যালকের বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু পরে জানা গেল তার শ্যালক পাননি। তার ধারণা প্রতারকচক্রটি এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তৃতীয়ত, সেবা গ্রহীতার নম্বরে ডাবল এসএমএস দিয়ে প্রতারকচক্রটি অহরহ প্রতারণা করছে। সম্প্রতি এক ডাক্তারও প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা খুইয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, তার বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকা এক আত্মীয় পাঠিয়েছেন। টাকা পাঠানোর পরপরই আরেকটি হুবহু এসএমএস আসে। পরে ফোনে জানানো হলো ভুল করে টাকা দু’বার পাঠানো হয়েছে। অনুনয় বিনয় করে টাকা ফেরত চাইলে ওই ডাক্তার সরল মনে পাঠিয়ে দেন। পরে ব্যালান্স চেক করে দেখেন শূন্য হয়ে গেছে। ওই নম্বরে ফোন করলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকচক্রের কবলে পড়েছেন। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি তার স্ত্রীকে বিকাশে দুই হাজার টাকা পাঠান। এর কিছুক্ষণ পরেই একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয়, ভুল করে তার ছোট ভাই দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। টাকাটি ফেরত নেয়ার জন্য অনুনয়বিনয় করেন। বারবার চাওয়ার পরে তার সরলমনা স্ত্রী টাকা ফেরত দিয়ে দেন। পরে ব্যালেন্স চেক করে দেখেন তার ব্যালেন্স শূন্য।
চুতর্থত, টার্গেট করে এসএমএস দিয়ে প্রতারণা করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র এক সাংবাদিক জানান, তিনি পরিবারের সাথে বাসায় বসে আছেন। হঠাৎ বিকাশ নম্বরে ১০ হাজার টাকার একটি এসএমএস আসে। এর পরপরই একজন ফোন করে নানা অনুনয় বিনয় করার পর তিনি ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে ব্যালান্স চেক করে দেখেন তার কাছে কোনো টাকা আসেনি। বিকাশে জমানো থাকা টাকা তিনি পাঠিয়েছেন। এ রকম প্রতারণা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশ, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ কেউই।
সহজ-সরল শিক্ষিত মানুষই বেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নানা কৌশলে প্রতারকচক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষিত ও ধনী ব্যক্তিরা কয়েক হাজার টাকার জন্য আইনের সহায়তাও নিতে চান না। আবার অনেকেই অভিযোগ করেই ক্ষ্যান্ত দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনায় মামলা করার কথা বললে ঝুট-ঝামেলা থেকে দূরে থাকার জন্য ভুক্তভোগী আর সামনে এগোতে চান না। সচেতন মহল মনে করেন, ধনী ব্যক্তিরা কয়েক হাজার টাকা প্রতারণার শিকার হলে তাদের যায় আসে না।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত