কয়েকদশক আগে গ্রামগঞ্জে মাইক, সাউন্ডবক্সের প্রচলন ছিলো না। তখন বিয়ে বা সুন্নাতে খাতনাতে গ্রামের মা-চাচীরা গায়ে হলুদ দেয়ার সময় এক ধরণের আঞ্চলিক গীত গেয়ে থাকতেন । সেই ধরণের একটি গোপালগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক গীত বা গান মুজিব একটি জাতির রূপকার চলচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে ।
গানটির শিরোনাম "কি কি জিনিস এনেছো দুলাল বিবি সখিনার লাইগা "। আঞ্চলিক এ গীতটির মূল সংগ্রাহক গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের গৃহিনী রাশেদা বেগম। প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি তার সংগ্রহে রেখেছেন এ গীতটি। দুই বছর আগে রাশিদা বেগমের ভাতিজা আলাল আহমেদ এর মাধ্যমে গানটি নেন মুজিব একটি জাতির রুপকার চলচিত্রটির সংলাপ তত্বাবধায়ক সাধনা আহমেদ।
এই ধরনের আরও চারটি গীত নেওয়া হয়েছিল রাশেদা বেগমের কাছ থেকে। তখনও তিনি জানতেন তার দেওয়া গান ইতিহাসের এক অধ্যায়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। গানটি ইতোমধ্যে দেশজুড়ে বেশ সাড়া ফেলেছে। এলাকাবাসীর মাধ্যমে রাশেদা বেগম জানতে পারে তার দেওয়া গান জাতির জনকের বায়োপিকে ঠাই পেয়েছি।
এরপর থেকে আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন রাশেদা বেগমের পরিবার ও তার এলাকাবাসী। রাশেদা বেগম কাশিয়ানী উপজেলার বরাশুর গ্রামের ফিরোজ মোল্লার স্ত্রী। চার সন্তানের এই জননীর সংসারের কাজ করেই কাটে সারাদিন।পড়াশোনা না জানা রাশেদা বেগম ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের বেশ কয়েকটি গীত শিখেছেন।
বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের গীত পরিবেশন করতেন এলাকার বিয়ে ও সুন্নাতে খাৎনার অনুষ্ঠানে। ২০২১ সালে রাশেদার ভাতিজা আলাল আহমেদ এর মাধ্যমে ৫ টি গীত সংগ্রহ করে মুজিব একটি জাতির রুপকার চলচিত্রটির সংলাপ তত্বাবধায়ক সাধনা আহমেদ। রাশেদা বেগম তার ছেলের মাধ্যমে গীত গুলো খালি গলায় গেয়ে রেকর্ডিং করে আলাল আহমেদ এর কাছে পাঠায়। এরপর আলাল আহমেদ চলচিত্রটির সংলাপ তত্বাবধায়ক সাধনা আহমেদ এর কাছে পাঠান।
পরে সাধনা আহমেদ গীত গুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শুনে ৫টি গীত এর মধ্যে কি কি জিনিস এনেছো দুলাল বিবি সখিনার লাইগা শিরোনামে গীতটি চলচ্চিত্রটির জন্য নির্ধারণ করেন। গীতটি তে কন্ঠ দিয়েছেন ভারতের শিল্পী উর্মি হক। গানটি প্রকাশের পর ব্যপক সাড়া ফেলেছে দেশজুড়ে। জেলার আঞ্চলিক ভাষার এই গীত ইতিহাসের অংশ হওয়ায় আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন রাশেদা বেগমের এলাকাবাসী।
নিজের সংগ্রহের গান চলচ্চিত্রটিতে ঠাই পাওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করছেন রাশেদা বেগম। এ বিষয়ে রাশেদা বেগম বলেন, দুই বছর আগে আমার ভাতিজা আলাল আমার কাছ থেকে ৫টি গীত রেকর্ড করে নেয়। তখন শুধু আমাকে বলছিল শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে একটি মুভি নির্মিত হচ্ছে সেখানে এই গীত দেওয়া হবে। তখন আমি বুঝতে পারি নাই। ভাবছি আলাল চেয়েছে তাই কিছু মনে না করেই দিয়ে দিয়েছি। কয়েকদিন আগে আমার মেয়ে তার শশুর বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে জানান আমার একটি গীত চলচ্চিত্রে ঠাই পেয়েছে। এরপর এলাকা থেকেও কয়েকজন আমাকে বলেছে।
অনেকে মোবাইল থেকে সেই গীতটি শুনিয়েছে। তারপর আমার বিশ্বাস হয়েছে। আমার সংগ্রহের গান জাতির জনকের চলচ্চিত্রে ঠাই পাওয়ায় আমি খুব আনন্দিত। ইতিহাসের অংশ হওয়ায় গর্বিত আমি। রাশেদা বেগমের স্বামী ফিরোজ মোল্লা বলেন, আমার স্ত্রীর সংগ্রহের গান ইতিহাসের অংশ হওয়ায় আমরা গর্বিত।
এলাকাবাসীরাও আমাকে গানটি শুনিয়েছেন।আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই।শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। এ বিষয়ে আলাল আহমেদ বলেন, তখনও চলচ্চিত্রটির নাম নির্ধারণ করা হয়নি। কারো একজনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির সংলাপ তত্বাবধায়ক সাধনা আহমেদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। জেলার আঞ্চলিক ভাষার ভুল গুলো আমার কাছ থেকে জানার জন্য। পরে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলার আঞ্চলিক ভাষার গীত এর জন্য।
পরে আমার ফুফুর কাছ থেকে পাচটি গীত রেকর্ড করে নিয়ে সাধনা আহমেদ এর কাছে দেই।এরপর গীত গুলো নিয়ে সাধনা আহমেদ যান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পরে পাচটি গীত এর মধ্যে থেকে কি কি জিনিস এনেছো দুলাল বিবি সখিনার লাইগা শিরোনামে গীতটি সিলেক্ট করেন। রাশেদা বেগমের এক প্রতিবেশী বলেন, আমরা ভাবতেও পারি নাই আমাদের রাশেদা আপার দেওয়া গীত প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হবে। মোবাইলে দেখেই আমরা রাশেদা আপার কাছে এসে বলি তোমার গীত শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে ঠাই পেয়েছে। পরে তাকে দেখানোর পর তিনি বিশ্বাস করেন। আমরা বেশ অবাক হয়েছি এ গীত দেখার পর।