নৃশংস সহিংসতার ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ইতিহাসের এক বর্বরোচিত কালো অধ্যায়


আজ ২১ আগস্ট ২০২০। আজ থেকে ষোল বছর আগের এই দিনে ঘটেছিল এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। যা ইতিহাসের এক বর্বরোচিত কালো অধ্যায়। ২০০৪ সালের সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছালে, একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি কুড়ি মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। সব কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এটি ইতিহাসের বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলা।
যা আগে কোনোদিন কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার একটি। তখন শেখ হাসিনাকে মানব ঢাল বানিয়ে বাঁচিয়েছিলেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। আজও তাদের স্মৃতিতে ভাসছে সেই ভয়াল কালো দিনের কথা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২ জন সহ মোট ২৪ জন নিহত হন এবং আহত হন ২৫০ জন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এই হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভি রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।
গ্রেনেড হামলায় আহত অনেকেই এখনও শরীরে আঘাত নিয়ে বেঁচে আছেন। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বুধবার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা হয়। নারকীয় গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১৯ জনের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। এছাড়াও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট ৪৯ জন আসামী ছিলেন।
এদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারেক রহমান এবং হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে মামলার নথিতে পলাতক দেখানো হয়েছে।বাকি তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা স্বাধীন বাংলা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। নৃশংস সহিংসতার ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বর্বরোচিত ঘটণা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে ছিন্নমূলে বেড়ে ওঠা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।