ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পর হলেও আজকের সরকার ৭১ পূর্ববতী সরকারের মতো, নিপীড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোনো অধিকার সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণমানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। শাসক শ্রেণির এরকম কর্মকাণ্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। আজ শুক্রবার (২০ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেল্স পার্ক) ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামিক আদর্শে রাষ্ট্রগঠনের লক্ষে কেন্দ্রীয় সমাবেশ থেকে দেওয়া ১৫ দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি। দাবি তুলে ধরে চরমোনাই পীর বলেন, যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে, দেশে মদ ও সকল ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে, শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে, পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে, শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিক্যবাদী সকল ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরি বাদ দিতে হবে। কারান্তরীণ সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া তিনি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করা, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া, নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে করা, রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া এবং রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরণের হয়রানী বন্ধ করা, দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ.জ) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা, এবং সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রন বিধিমালা ২০২২ নামক মদ সহায়ক একটি বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার দেশে মদ ও অ্যালকোহল আমদানি, রফতানি, উৎপাদন বিপণন ও বিক্রয় সংরক্ষণের দুয়ার উন্মুক্ত করতে চাইছে। মাদকে একটি সাধারন ও সহজলভ্য পানীয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যার মাধ্যমে গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন মুসলমানের জীবন থাকতে এদেশে মদের বিধিমালা করতে দেওয়া হবে না। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে এইচএসসি পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়বলী থেকে ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলাম শিক্ষার আগ্রহ হারাচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরে যতোটুকু ইসলাম শিক্ষা রাখা হয়েছে তাতেও ইসলামকে খণ্ডিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর উচ্চ শিক্ষায় ইসলাম শিক্ষাকে একবারেই বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষার সকল স্তরেই ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। দলের সিনিয়র নায়েবে আমির, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের (শায়েখে চরমোনাই) সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব, হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি হাজরত মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, কেন্দ্রীয় দাওয়াহ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, সহ অর্থ সম্পাদক মাওলানা নূরুল ইসলাম আল আমীন, ইসলামী যুব আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জেনারেল আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক জেনারেল হাফেজ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতী সৈয়দ জিয়াউল করীম, বরিশাল সদর জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানমুফতী হেদায়েতুল্লাহ আজাদী, বাকেরগঞ্জ নিয়ামতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

By