নওগাঁর রাণীনগরে ২২ কিলোমিটার বেহাল রাস্তায় জনদুর্ভোগ চরমে


নওগাঁর রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ ২২ কিলোমিটার বেহাল রাস্তায় জনদুর্ভোগ চরমে পরিণত হয়েছে। বুষ্টি হলেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় রাস্তাটি। গত প্রায় চার বছর ধরে কার্পেটিং তুলে ফেলে রাখা হয়েছে এই ২২ কিলোমিটার রাস্তার। ফলে রাস্তায় বড় বড় গর্ত এবং উঁচু-নিচু সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় রাস্তাটি যেন রাণীনগর উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকার লাখ লাখ মানুষের চলাচলে গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। শুক্রবারের বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা-পানিতে পরিণত হওয়ায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ঘবর পাওয়া গেছে। এই জনদূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত রাস্তার কাজ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদরের বাসট্যান্ড গোলচত্বর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত মোট ২২ কিলোমিটার রাস্তায় যানবাহন চলাচলে চাপ বাড়লে এবং এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে এলজিইডি থেকে রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। রাস্তাটি রাণীনগর-আবাদপুকুর থেকে কালীগঞ্জ হয়ে নাটোরের সিংড়ার ঢাকা-রাজশাহী মহা সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে।
রাস্তা জুড়ে ২৬টি কালভার্ট ও ৪টি ব্রিজ পূর্ণ নির্মাণ এবং রাস্তাটি টিকসই, মজবুত ও প্রসস্থ্য করে পাকা করণের লক্ষে ২০১৮ সালে সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ থেকে টেন্ডার দেয়া হয়। এরপর রাস্তার সমস্ত কার্পেটিং তুলে কোন রকমে রোলার দিয়ে ফেলে রাখেন ও আবাদপুকুর থেকে কালীগঞ্জ রাস্তার মাঝে কিছু জায়গায় পাথর ফেলেন এবং কালভার্ট ও ব্রিজ ভেঙ্গে নির্মাণ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পরে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেন। এরপর অতিরিক্ত সময়েও কাজ শেষ করতে না পাড়ায় গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলসহ জরিমানা করে আবার নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

এরই মধ্যে আগের ঠিকাদার উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর রাস্তার কাজ আর শুরু হয়নি। এরপর উচ্চ আদালত গত বছরের ২৯ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সরকারের) পক্ষে রায় দেন। তারপর কয়েক মাস পেড়িয়ে গেলেও এখনো রাস্তাটির কাজ শুরু হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। এলাকাবাসি জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কাজ বন্ধ থাকায় রাস্তার মধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার কোথাও কোথাও টেউ টিনের মতো উচুঁ-নিচু হওয়ায় যানবাহন চলাচল করছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা লেগেই থাকে। আর শুক্রবার বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এতে করে রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
আর ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দূর্ভোগ এড়াতে অধিকাংশ লোকজন বর্তমানে রাণীনগর পৌঁছতে মূল রাস্তায় না গিয়ে বিকল্প পথে প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে চলাচল করছেন। সিএনজি, অটোরিক্সা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা জানান, ভাঙ্গা রাস্তায় গাড়ী চলাচলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে গাড়ীর বিভিন্ন যত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা-পানিতে পরিণত হয়েছে। ফলে এই রাস্তা গাড়ী চালাতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। যাত্রী আবুল কালাম, নজরুল, একরামুল, আসলামসহ অনেকেই জানান, রাস্তার যে দূর্গতি একবার চলাচল করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রচুর ব্যথায় শরীর অচল হয়ে পড়ে। বৃষ্টিতে রাস্তায় কাদা-পানির কারণে বেহাল অবস্থায় গাড়ীতে করে এই রাস্তা দিতে চলাচল করতে হচ্ছে।
এমনকি কাদা-পানির কারণে গাড়ী স্লিপ কেটে কয়েক স্থানে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। আর রোদে ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যায়। তবে এই রাস্তায় গর্ভবতি নারী কিম্বা জটিল কোন রুগী পরিবহণ করা সবচাইতে কষ্ট সাধ্য হয়ে পরছে। এছাড়া মালামাল পরিবহণে একদিকে যেমন চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অন্য দিকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। দ্রুত এই রাস্তার কাজ শেষ করে এলাকাবাসীকে এই জনদূর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এবিষয়ে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, আইনী জর্টিলতা শেষ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।