ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে নির্বাক দিনমজুর বাবা, শোকে কাতর মা

 বেশ কয়েকদিন যাবৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন ফিরোজ কাজী।গোপালগঞ্জ সদরের নিজ গ্রামের বাড়িতে চিকিৎসা শেষে গত ১৭ ই সেপ্টেম্বর শনিবার বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যান ফিরোজ।

বেশ কিছুদিন যাবৎ প্রেম ঘটিত একটি বিষয়ে হতাশায় ভুগছিলেন ফিরোজ। ঢাকায় যাওয়ার আগে তার মায়ের কাছে কথা দিয়েিলেন আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটাবেন না কখনো। কিন্তু মাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলেন না ফিরোজ। ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচারাল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন ।সে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১ হলের ছয়তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে ফিরোজ। ঢাবি শিক্ষার্থী ফিরোজ কাজীর মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলের এমন মৃত্যুতে শোকে কাতর ফিরোজের মা। এদিকে ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক দিনমজুর বাবা চুন্নু কাজি ।মঙ্গলবার বিকালে গ্রামের বাড়িতে ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ পৌছানোর পর শুরু হয় এক হৃদয় বিদারক গল্পের।কান্নায় ভেঙে পড়ে ফিরোজের স্বজন সহ এলাকাবাসী। বাদ আছর জানাজা শেষে নিজ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ফিরোজ কে। মঙ্গলবার বিকালে ফিরোজের নিজ গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের পুখুরিয়া গিয়ে দেখা যায়, নিজ ছেলের লাশ সামনে নিয়ে দাড়িয়ে নির্বাক ঢাবি শিক্ষার্থী ফিরোজের দিনমজুর বাবা চুন্নু কাজি। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর ফিরোজের মা।

পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরোজের বাবার কাছে ফোন আসে ফিরোজ কাজী আত্মহত্যা করেছে। এরপর ঢাকায় ছুটে যায় পরিবারের সদস্যরা। তারা গিয়ে জানতে পারেন মঙ্গলবার রাত ২টা ৪০ মিনিটে ফিরোজের কক্ষে গিয়ে টেবিলে রাখা একটি প্যাডে কিছু লেখা দেখতে পান তার বন্ধুরা। এ সময় তার টেবিলে মুরগির মাংস ও ভাত রাখা ছিল। বন্ধুরা তার জন্য খাবার রুমে এনে রেখেছিলেন।

ফিরোজ তা না খেয়েই হঠাৎ রুম থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরই বিজয় ৭১ হলের ভবন থেকে পড়ে যাওয়ার খবর পান তার বন্ধুরা। তবে তিনি বিজয় ৭১ হলে কার কাছে গিয়েছিলেন তা জানা নেই বলে জানে না তারা। এরপর ফিরোজের পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন করা হয়। তাদের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, নিহত ফিরোজ কাজী ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী।

নিজ গ্রামের একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৯১ ও গোপালগঞ্জ শহরের একটি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে ৪. ৩৩ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হয়ে ২০১৯ – ২০ বর্ষে ভর্তি হন ফিরোজ। ফিরোজের বাবা এলাকায় দিনমজুরি করে ফিরোজ সহ তিন সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

তিন ভাইয়ের মধ্যে ফিরোজ দ্বিতীয়। ফিরোজের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না সহপাঠী সহ এলাকাবাসী। দাফনে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ ৬৩ বিশিষ্ট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আসে ফিরোজের বাড়িতে। শিক্ষার্থী ও সহপাঠী কে হারিয়ে নির্বাক তারাও।

তবে এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তারা। তবে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, ফিরোজের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে সেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নিহত ফিরোজের মা। কিন্তু ফিরোজের বাবা দিনমজুর হওয়ায় ফিরোজের মায়ের সঙ্গে আর দেখা করেনি সেই মেয়ে। পড়ে মাকে নিয়ে ফিরে আসে নিজ গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে সেখানে এসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ফিরোজ।

বাড়িতে চিকিৎসা শেষে গত শনিবার ঢাকায় যায় ফিরোজ।এবিষয়ে হতাশায়ভুগছিলেন ফিরোজ। ঢাকায় যাওয়ার আগে মাকে কথা দিয়েছিলেন এমন ঘটনা ঘটাবে না। কিন্তু সেই কথা আর রাখলো না ফিরোজ। নিহত ফিরোজের মায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছাওলডা কাল রাত নয়টার সময় ফোন দিয়েছিল। আমাকে ফোন দিয়ে বলে, মা আমি ভালো আছি। তুমি আমরে নিয়া চিন্তা কইরো না।

আমি এখানে খুব ভালো আছি।এইডা -ই আমার বাবার সাথে আমার শেষ কথা হইছে। আমার বাবা আমারে আর কিছু বইলে যাই নাই। নিহত ফিরোজের বড় ভাই ফেরদৌস কাজি বলেন,রাত দুইটার সময় আমাকে ফিরোজের বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে বলে ফিরোজ আত্মহত্যা করেছে। আমরা বাসা থেকে রওনা হয়ে রাত চার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ গিয়ে পৌছাই। সেখানে গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই। ফিরোজের এক এলাকাবাসী রাফিন মোল্লা বলেন,ফিরোজের বাবা চুন্নু কাজী এলাকায় কৃষি কাজ করেন। অনেক কষ্ট করে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ যোগান। তিন ছেলে মধ্যে ফিরোজ কাজী ছিলেন দ্বিতীয় মেধাবী। মা বাবার স্বপ্ন ছিলো ছেলে লেখা পড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবে।

সেদিন হয়তো তাদের কষ্ট ঘুচবে। লেখা পড়া শেষ করার আগে লাশ হয়ে ফিরলো। বাড়িতে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফিরোজ কাজীর বাবা চুন্নু কাজী বলেন, ‘ছেলের এমন মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারছিনা । প্রায়ই বাড়িতে কথা বলত। বাড়ির আমাদের খোঁজ নিতো । আমার বুকের ধন চলে গেল ।

আর কারও সন্তানের যেন এমন মৃত্যু না হয়। গতরাত ৯টার সময় ফিরোজের সাথে কথা হয়েছিল আমাদের। তখন আমার ছেলে আমাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলছিল। আমাদের কে সে বলেছিল তাকে নিয়ে যেন আমরা চিন্তা না করি। কিন্তু রাত আর পার হলো না। রাত শেষ হওয়ার আগেই চিন্তা শেষ করে দিছে।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় ৭১ হল থেকে লাফিয়ে পড়ে ফিরোজ কাজী (২২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঢাবির চাইনিজ এজ এ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাবির বিজয় ৭১ হলের ২০৩ নং কক্ষের ফিরোজের টেবিলে রাখা প্যাডে লেখা ছিলো, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমারে মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’ এই পৃষ্ঠার উপরে ১৯/০৯/২৩ তারিখ এবং



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *