জ্বলছে দীর্ঘদিন যাবত লক্ষাধিক অবৈধ গ্যাস এর চুলা

শিল্পাঞ্চল নামে পরিচিত সাভার ও আশুলিয়া। ছোট বড় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় দেশের প্রায় অনেক জেলার মানুষের পদচারণা এই এলাকায়। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাসিন্দাদের গ্যাসের চাহিদা। আর অধিক চাহিদাকে পুঁজি করে এই এলাকায় অবৈধভাবে জ্বলছে লক্ষাধিক গ্যাস এর চুলা। ঘন ঘন অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবার সংযোগ প্রদান করেছেন কিছু অসাধু গ্যাস চোর। এসব সংযোগে ব্যবহার করা পাইপ নিম্নমানের হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান চলমান থাকলেও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে অবৈধ গ্যাস চোর চক্র। এদিকে তিতাস গ্যাস টি অ্যান্ড ডি কোম্পানি লিমিটেড, সাভার আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের তথ্যমতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি হতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৬৫টি স্পটে ৭০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এসব অভিযানে ২০৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সংযোগের ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮০টি বিভিন্ন সাইজের পাইপ, ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮০টি বার্নার জব্দ করা হয়। মামলা করা হয় ১২টি। এসব মামলার ১৪ আসামিকে গ্রেফতার ও জেল জরিমানা করা হয়। তবুও অবাধেই চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। সাভার তিতাস গ্যাসের জোনাল অফিসের তথ্য মতে, এখনও প্রায় ৪২টি পয়েন্টে আনুমানিক ৫৮.১০ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগে আরোও লক্ষাধিক চুলা অবৈধভাবেই জ্বলছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৭টি। এসব দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ও দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন শিশুসহ অন্তত ১৩ জন।

দুর্ঘটনাগুলোর বেশির ভাগই ঘটছে কাঠগড়া, ঘোষবাগ, পানধোয়া ও মানিকগঞ্জ পাড়া এলাকায়। তবুও এসব এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ অবাধেই ব্যবহার করছেন বাড়িওয়ালা। আর সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চোরাকারবারিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়ার তাজপুর এলাকার অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করা এক বাড়িওয়ালা সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের তাজপুর এলাকায় তিনটি বাড়ি। এর মধ্যে একটি বাড়িতে গ্যাস সংযোগ নেই। তাই কম ভাড়াতেও ভাড়াটিয়া থাকছে না। এতো টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি। ঠিকঠাক মতো কিস্তিই দিতে পারবো না। এসব এলাকায় গ্যাস ছাড়া শ্রমিকদের অনেক কষ্ট হয়। তাই বাড়িওয়ালা ও শ্রমিকদের সুবিধার জন্য বৈধ গ্যাসের ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার শ্রমিক তাসলিমা বলেন, ‘সকাল ৮টায় আমাদের অফিস টাইম। তিনদিন ৫ মিনিট নির্ধারিত সময়ের বেশি অতিবাহিত হলে ১ দিন অনুপস্থিত বলে গণ্য করে।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডিউটি করে আবার সকালে লাকড়ি দিয়ে রান্না করা খুব কষ্টকর। এ কারণে সময় কখন চলে যায় বোঝাই যায় না। কোন সময় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। এজন্য গ্যাস আমাদের জন্য অনেক উপকারী, তবে নিরাপদ ও বৈধ গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে আমরা গ্যাসের দাবিদার। কেননা শ্রমিকের সুবিধা অসুবিধাও তো দেখতে হবে। করোনাকালীন সময়ে আবারো চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর এক হুশিয়ারিতে নিজেদের দেওয়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিজেরাই উচ্ছেদ করতে শুরু করেছে গ্যাস চোরা কারবারিরা।

গত ১২ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার পশ্চিমপাড়া, প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন এলাকা, ক্যামিকেল রোড ও পূর্বপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন স্থানীয় আওয়ামী নেতা মজিবর রহমান। তিতাস কর্তৃপক্ষের দাবি, তারই ভাতিজাসহ কয়েকজন অবৈধ এই গ্যাস সংযোগ প্রদান করেছিলেন। গত ৫ মে তিনি আরও একবার নিজ উদ্যোগে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। তিতাস গ্যাস টি অ্যান্ড ডি কোম্পানি লিমিটেড, সাভার আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে সাভার আশুলিয়ায় অবৈধ প্রায় সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলাম। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে আবারো চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে তারা আবার পুণঃসংযোগ দিয়েছে। এসব সংযোগ আবার আমরা উচ্ছেদ করা শুরু করেছি। যারা এসব সংযোগ দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *