চরম হুমকির মুখে পিরোজপুরের ক্রিকেট ব্যাট শিল্প


বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। টি-টুয়েন্টি হোক, ওয়ানডে হোক আর টেস্ট ম্যাচই হোক ক্রিকেট খেলতে ব্যাটের বিকল্প নেই। জনপ্রিয় এ খেলার প্রধান উপকরণ ক্রিকেট ব্যাট, যা তৈরি হচ্ছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বিন্না গ্রামে। এ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে বিশ^মানের ব্যাট তৈরি হলেও নানা মুখি সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে এ শিল্পটি। সরকারের সহযোগিতা পেলে সারা বিশে^ রপ্তানি হবে বিন্না গ্রামের ব্যাট।
নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে ৫-৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে বেলুয়া নদীর পূর্বপাড়ে এ গ্রাম অবস্থিত। একেবারে আধুনিক কালের খেলা ক্রিকেটর সেই ব্যাট প্রায় ৩০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে এখানকার ছায়া ঘেরা বাড়ির ঘরোয়া কারখানায়। এ ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রামগুলোতে ব্যাটের কারখানা থাকলেও ব্যাট তৈরির সূচনা আর অধিক সংখ্যক কারখানা থাকায় বিন্না ব্যাটের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার গ্রামীণ মানুষ। অন্যদিকে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কাঠের বাজার এ উপজেলায় অবস্থিত। তাছাড়া প্রচুর গাছগাছালি থাকায় এবং কাঠের সহজ লভ্যতা ও শ্রমমূল্য কম হওয়ায় এ উপজেলায় প্রসার ঘঠে ব্যাট তৈরির কারখানার। বিন্নাকে অনুুসরণ করে কারখানাগুলো একে একে ছড়িয়ে পরে চামী, ডুবি, আদর্শ, বয়া, পঞ্চবেকী,ও আউড়বুনিয়া গ্রামে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এবং জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় হুমকির পড়েছে এ শিল্প।
এ অঞ্চলে ব্যাট তৈরির সূচনাকারী পুরুস্কার বিজয়ী নিলুফ্রা ইয়াসমিন জানান,ব্যাট কারখানার পথ প্রদর্শক আবুল কালামের দেখাদেখি পাশ^বর্তী গ্রামগুলোসহ গড়ে উঠেছে প্রায় আরোও চার শতাধিক কারখানা। কিন্তু এ গ্রামে স’মিল গড়ে না ওঠার কারণে বিপাকে পড়েছেন কারখানার মালিকরা। এসব কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে কিশোর ও তরুণ। বাড়ির মহিলাসহ বসে নেই স্কুল পড়–য়া ছেলে মেয়েরা। আবার প্রায় সব পরিবারের অধিকাংশই এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে এক সময় এসব পরিবারগুলো ভাল আয় করলেও বর্তমানে তারা রয়েছেন আর্থিক সংকটে। তিনি আরোও বলেন, একটি ভাল শিল্প শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার অভাবে সুন্দরভাবে বিকশিত হচ্ছে না।
ব্যাট তৈরির কারিগর মো. রফিকুল ইসলাম জানান,ক্রিকেট ব্যাট তৈরিতে সাধারণত ব্যবহৃত হয় আমড়া, কদম, ডুমুর,আর ছাতিয়ান কাঠ। আমাদের এই ব্যাট স্টেডিয়ামে খেলার জন্য মানসম্মত নয় বলে পাকিস্তাান থেকে আমদানি করতে হয় কিন্তু আমরা যদি সুন্দরবনের গেওয়া কাঠ সংগ্রহ করতে পারি তাহলে আমরাও বিশ^মাানের ক্রিকেট ব্যাট তৈরিতে সক্ষম। সরকার আমাদেরকে উন্নতমানের কাঠের যোগান দিলে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ক্রিকেট ব্যাট বিশ^ বাজারেও রপ্তানি করতে পারবো।
বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ সাঈদুর রহমান জানান, এ শিল্পের কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় তারা ততটা সফলতা পাচ্ছে না। এই ইউনিয়নের মধ্যে যাতায়েতের জন্য ১৩টি লঞ্চ চলাচল করে যার কোনো বিকল্প নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতে পারে না। সরকারি সহায়তা পেলে এ গ্রামে তৈরি হতো বিশ^মানের ব্যাট।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন(বিসিক) উপব্যবস্থাপক মিলটন চন্দ্র বৈরাগী জানান, নেছারাবাদের ক্রিকেট ব্যাট শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। প্রায় ১৫ টি গ্রামে এই শিল্পিরা একে একে ব্যাট নিয়ে কাজ করে কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা রাস্তাঘাট খুবই খারাপ হওয়ার কারণে এবং ক্রিকেট ব্যাটের কাচামাল স্বল্পতা থাকার কারণে দিনে দিনে শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই শিল্পটি ধরে রাখার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা রাস্তাঘাট এবং কাচামাল সঠিকভাবে যোগান দিতে হবে তাছাড়া আমরা (বিসিক) উন্নত প্রশিক্ষণ এবং সরকারি প্রোনোদনা ব্যবস্থা করে যাচ্ছি এবং মেশিনারি ও কারিগরি জ্ঞান সরবারহ করতেছি
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ জাহেদুর রহমান জানান, আমি সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের প্রতি সকল প্রকার সহায়তার পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।