গোপালগঞ্জে বিচারাধীন একটি মামলায় ভুয়া সাক্ষী সেজে সাক্ষ্য দিতে এসে বাদী ও আসামি সহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ জামিল আহমেদ বৃহস্পতিবার নিজে বাদী হয়ে ময়না বেগম (৩০), ছলেমান শেখ (৪০), ওলেমান শেখ (৩৫), নার্গিস বেগম (৪৪), মোঃ মোস্তফা ফকির (৬৫), মোছাঃ বছিরন বেগম (৬৪), কোব্বাত আলী (৫৫), নাদিম (২৬) ও নূর ইসলাম (২৩) সহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা নং গোপালগঞ্জ সিঃ আরঃ ৮৯২/২০২০ মোকদ্দমা দঃ বিঃ ১৯৩/১৯৬/২০৫/ ৪১৯/১০৯ ধারা মতে। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, মুকসুদপুর জিঃ আরঃ ৫১/২০১৯ নং মামলার সাক্ষীর জন্য বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) গোপালগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে দিন ধার্য ছিলো। উক্ত মামলায় নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষে বিজ্ঞ অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. এম. এ. হাই এজাহারকারী সহ ৪ জন সাক্ষীর হাজিরা দাখিল করেন। উক্ত সাক্ষীদের মধ্যে পি.ডব্লিউ—৩ হিসেবে মোছাঃ রোকেয়া বেগম স্বামী— মোঃ সূর্য শেখ, থানা— মুকসুদপুর, সাং— ফতেপট্টি, জেলা— গোপালগঞ্জ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য হলফান্তে জবানবন্দি গ্রহণকালে বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষীর স্বামীর নাম একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার স্বামীর নাম না বলে ইতস্তত করতে থাকে।
সাক্ষী যখন তার স্বামীর নাম বলতে পারছিলেন না তখন ডকে দাঁড়ানো আসামিদের মধ্যে একজন উক্ত সাক্ষীকে তার স্বামীর নাম মোঃ সূর্য শেখ বলতে বলে। এতে বিজ্ঞ আদালতের সন্দেহ হলে তিনি পুলিশ রিপোর্ট পরীক্ষায় দেখতে পান যে, পুলিশ রিপোর্টে সাক্ষী মোছাঃ রোকেয়া বেগম, স্বামী— মোঃ সূর্য শেখ, সাং— ফতেপট্টি, থানা— মুকসুদপুর, জেলা— গোপালগঞ্জ এর বয়স ৬০ বছর উল্লেখ রয়েছে। যদিও ডকে উপস্থিত সাক্ষীর বয়স ২৫ বছর বলে প্রতীয়মান হয়। তখন বিজ্ঞ আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত সাক্ষী তার প্রকৃত নাম ময়না বেগম, স্বামী— আকরাম সিকদার, সাং— পূর্ব হাসামদিয়া, থানা— ভাঙ্গা, জেলা—ফরিদপুর বলে জানায়। উক্ত ময়না বেগম বিজ্ঞ আদালতে হলফান্তে জবানবন্দি দিয়ে জানান যে, মুকঃ জিঃ আরঃ ৫১/২০১৯ নং মামলার আসামিরা ও এজাহারকারী তার আত্মীয় হয় এবং তারা পরস্পর যোগসাজশে তাকে রোকেয়া বেগম সাজিয়ে আদালতে হলফান্তে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে নিয়ে আসে।
বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. এম.এ. হাই বিজ্ঞ আদালতকে জানান যে, উক্ত মামলার এজাহারকারী মোঃ মোস্তফা ফকির তার নিকট উক্ত ময়না বেগমেকে সাক্ষী রোকেয়া বেগম উল্লেখে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে। উক্ত মামলার এজাহারকারী ও আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মোছাঃ রোকেয়া বেগম এর স্থলে ময়না বেগমকে আদালতে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছে মর্মে বিজ্ঞ আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়। আসামি ময়না বেগম অপর আসামিদের যোগসাজশে ছদ্মনাম ধারণ করে আদালতে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে ডকে উঠে মিথ্যা পরিচয়ে শপথ বাক্য পাঠ করে দন্ড বিধির ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/ ৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৩৮০/৪২৭/৫০৬(২)/১১৪ ধারার মামলায় সাক্ষ্য দিতে শুরু করে যা দন্ডবিধির ১৯৩/১৯৬/২০৫/৪১৯/১০৯ ধারার অপরাধ। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে উক্তরূপ কাজের মাধ্যমে দন্ডবিধির ১৯৩/১৯৬/২০৫/ ৪১৯/১০৯ ধারার অপরাধ করেছে। অপরাধ আমলে নিয়ে ন্যায় বিচারের স্বার্থে গোপালগঞ্জের বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন ভূইয়া এর অনুমতিক্রমে ও বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশিত মতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ জামিল আহমেদ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে গোপাঃ সিঃ আরঃ ৮৯২/২০২০ একটি মামলা দায়ের করেন। পরে গোপালগঞ্জ সদর আমলী আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বীণা দাশ মামলার বাদী ও আসামি সহ অভিযুক্ত ৯ জনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।