গোপালগঞ্জে নিজ হাতে বানানো চেয়ার প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারলেন না বিল্লাল হোসেন
পরম যত্নে নিজ হাতে বানানো আলোচিত সেই চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারলেন না গোপালগঞ্জ পৌর কৃষকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন। শুক্রবার (১৮ জুন) সকালে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন… যতদূর জানাগেছে, বিল্লাল হোসেন মনে অনেক কষ্ট ও ক্ষোভ নিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন। পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি।
লেখাপড়া খুব একটা না জানলেও তার মনটা ছিলো বেশ উদার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র প্রতি ছিলো পরম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা। সদ্য প্রয়াত বিল্লাল হোসেন গোপালগঞ্জ পৌর কৃষকলীগের একসময়কার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। পেশায় কাঠমিস্ত্রি হওয়ার সুবাদে ২০০৭ সালে তিনি নিজ হাতে ৫টি চেয়ার ও ১টি ডাইনিং টেবিল তৈরি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। পরে বাস্তবজীবনে নানা চড়াই- উৎরাই পেরিয়ে জীবন যুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী সৈনিক মনের ক্ষোভে প্রবাসী জীবন যাপন করেন। নাড়ির টানে ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় একটি রাজকীয় চেয়াার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিবেন বলে তৈরি করেছেন।
২০১৯ সালে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ হাতে বানানো সেই চেয়ারটি দিতে ব্যর্থ হন তিনি। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় চেয়ারটি আর প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়ে ওঠেনি। আলোচিত সেই চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রীর এপিএস -২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু’র নিকট রয়েছে বলে মৃত্যুর আগে জানান তিনি। অসুস্থ বিল্লাল আক্ষেপ করে বলেন, যখন সে তাঁর পরিবার-পরিজন ও দলকে কিছু দিতে পেরেছিলো, তখন তার বেশ কদর ছিলো। পরবর্তীতে, বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক সমস্যায় সব হারিয়ে তিনি মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন, তখন কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি, শত ডেকেও বিপদে কাউকে পাশে পাননি তিনি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পরিবারের আপনজনেরও সাহায্য না পেয়ে মনে প্রচুর কষ্ট ও চাপা ক্ষোভ নিয়ে দীর্ঘদিন প্রতীক্ষায় ছিলেন তিনি।
তবে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান অসুস্থ বিল্লাল হোসেনের নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন এবং প্রতিমাসে তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করেছেন। সুস্থ হওয়ার পর তাকে একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন মানবিক এ নেতা। বিল্লাল হোসেনের অসুস্থতার খবর শুনে গোপালগঞ্জের মানবিক ডিসি শাহিদা সুলতানা নিজ উদ্যোগে তাকে সুচিকিৎসার জন্য গত ১১ জুন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের উপস্থিতিতে শহরের মারকাজ জামে মসজিদে শুক্রবার বিকালে বিল্লাল হোসেনের জানাযা নামাজ আদায় শেষে পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এদিকে গোপালগঞ্জ পৌর কৃষকলীগের সাবেক নেতা বিল্লাল হোসেনের মৃত্যুতে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক, সাংবাদিক কে এম সাইফুর রহমান সহ মরহুমের আত্মীয়-স্বজন গভীর শোক প্রকাশ করে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।