বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ কোভিড-১৯ ভাইরাস পৃথিবীসহ বাংলাদেশেও তার ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এমতাবস্থায় সরকারি বেসরকারিভাবে সকলকে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার করা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া ইত্যাদি বার্তা জনগনকে রক্ষায় প্রচার চালানো হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি এই উদ্যোগকে সকলে সাধুবাদ জানালেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় দারিদ্র্যতা। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অতি দরিদ্র পরিবারগুলোর দিকে নানাভাবে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায় সকল সহযোগীতার বেশিরভাগই খাদ্য সামগ্রী। যা অতিদরিদ্র পরিবারগুলোকে ঘরের বাহিরে বাহির না হওয়ার জন্য এই উদ্যোগ। অপরদিকে এই সহযোগীতা প্রয়োজন ও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই জীবিকার তাড়নায় অনেকেই বাহিরে বাহির হচ্ছে। এমনাবস্থায় তাদের প্রয়োজন নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য কিছু অতি প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র।এমন উপলব্ধি থেকেই বেসরকারি সহযোগী সংস্থা জেজেএস আন্তজার্তিক সহযোগী সংস্থা কনসার্ন ওয়াল্ডওয়াইড এর সহায়তায় কোষ্টাল কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট এর মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা ও মোংলা উপজেলায় নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
কার্যক্রমের মধ্যে প্রকল্পের কর্মীগন সরকারি বিধিমালা মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রকল্পের সকল উপকারভোগী, স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ সিএসপি ও ক্রাগ সদস্যদের সচেতন করছেন। পাশাপাশি প্রকল্পের গ্রুপ লিডারগন, সিএসপি ও ক্রাগবৃন্দ সকলের মাঝে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, বহিরাগতদের হোমকরেন্টাইন নিশ্চিতে প্রশাসনকে সহায়তা করা, এলাকাতে জিবানুনাশক ছিটানো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের ভোকেশনাল সহায়তাপ্রাপ্ত সদস্যগন কাপড় দিয়ে তিনস্তর বিশিষ্ট মাস্ক তৈরি করে বিতরন ও বাজারজাত করছে। প্রকল্পের পক্ষ থেকে মোংলা ও শরণখোলা উপজেলায় সামর্থ্যহীন অতিদরিদ্র ৬০০ পরিবারকে অতি প্রয়োজনীয় হাইজিন কিট (ঢাকনাযুক্ত ট্যাবসহ বালতি, মগ, মাস্ক, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, স্যানিটারি ন্যাপকিন) বিতরন করে। এ সহায়তাপ্রাপ্ত মিঠাখালী ইউনিয়নের সদস্য লিচি হালদার (৩০) বলেন- " আমরা বেঁচে থাকার জন্য পরিশ্রম করে ও সরকারি বেসরকারি সহায়তায় খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারি, কিন্তু করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এসকল দ্রব্যাদি সংগ্রহ করা ও কেনা সম্ভবপর হয়না। জেজেএস আমাদের নতুন করে বাঁচার পথ দেখালো।"
মোংলা ও শরণখোলা উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে, উপজেলা পরিষদ দপ্তরে, ইউনিয়ন পরিষদ, সিপিপি সদস্যদের মধ্যে ২৯০ জনকে হাইজিন কিট বিতরন, বিতরনে সহায়তাকারী ৪০ জনকে পিপিই প্রদান করেছে। বিতরন কার্যক্রমে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিতরন প্রসংগে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান বলেন- "জেজেএস কর্তৃক প্রদত্ত হাইজিন প্যাক এ উপজেলায় করোনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।"
এ প্রসংগে রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পিও সত্যরঞ্জন বিশ্বাস বলেন- "জেজেএস সকল সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নানাবিধ দুর্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে থাকে। তার ধারাবাহিকতায় মহামারি রোধে এই অতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন। আমরা সকল তালিকা ও বিতরন স্বচ্ছতার সাথে করতে পেরেছি।"
জেজেএস ও কনসার্ন ওয়াল্ডওয়াইল্ড কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আপডেট তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি কল্পে প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক সিএসপি, ক্রাগ ও ইউডিএমসির মধ্য থেকে ১৫০ জনকে অনলাইনের মাধ্যমে করোনা বিষয়ক ওরিয়েন্টশন প্রদান করেছে এবং তাদের নিয়ে অনলাইন গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন বার্তা প্রদান ও মতামত গ্রহন করছে।
এ প্রসংগে জেজেএস এর প্রকল্প সমন্বয়কারী জিয়া আহম্মেদ বলেন- "জেজেএস সকল সময় অতিদরিদ্র মানুষের পাশে থাকতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের অতিব সুক্ষ চাহিদাগুলোকে মুল্যায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই উদ্যোগ গ্রহন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনলাইনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে করোনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের একটি গ্রুপের মধ্যে নিয়ে আসা, যেটা ব্যতিক্রম আয়োজন। আমরা শুধু হাত ধুতে ও মাস্ক পরতে বলিনা, মানতে সহায়তা করি। আমাদের এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।"