কুলাউড়ায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এম এম শাহীন

কুলাউড়ার বিএনপির রাজনীতি যখন সংকটে। তখন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের হাত ধরে ১৯৯০ সালে কুলাউড়া রাজনীতিতে এমএম শাহীনের যোগদান। এম এম শাহিন হলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী,সাংবাদিক এবং সাবেক সংসদ সদস্য। অর্থবিত্ত আর চৌকস নেতৃত্বগুণে ভোটারদের মন জয় করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া উপজেলা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হন এমএম শাহীন। সেই সময় বিএনপি তথা ৪ দলীয় জোট মনোনয়ন দেয় জামায়াতে ইসলামী তথা ৪ দলীয় জোটের প্রার্থীকে। দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মো. মনসুর আহমদকে পরাজিত করে দেশজুড়ে চমক দেখান। ২০০৫ সালে বিএনপিতে ফের যোগদান করলেও ২০০৮ সালে নির্বাচনে ওয়ান ইলেভেন ইস্যুতে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। এক ভোটে দুই এমপি ইস্যু তুলে জোটবদ্ধ হন সুলতান ও আব্বাছ। পরাজিত হলেও এক লাখ ৫ হাজারেরও বেশি ভোট পান শাহীন। এরপর ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নেননি তিনি।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফের জমজমাট হয়ে উঠে কুলাউড়ার রাজনৈতিক অঙ্গন। সুলতান মো. মনসুর বিএনপি জোটে গিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিলে বসে থাকেননি এমএম শাহীন। তিনি বিকল্প ধারায় যোগ দিয়ে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশ নেন নির্বাচনে। সিলেটের জনসভায় মহাজোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নৌকায় তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে এমএম শাহীন ৭৭ হাজার ১৭০ ভোট পান।

এরপর থেকে সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ানুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে কুলাউড়ায় গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। গত প্রায় এক বছর থেকে ইউনিয়নে ইউনিয়নে সভা সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করছেন। ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তার এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন বলে এমএম শাহীন জানান।

অপরদিকে ২৫ বছর ধরে এম এম শাহীন কুলাউড়ার বিএনপির হাল ধরেছিলেন শক্ত হাতে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে এবং ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ফুটবল প্রতীক নিয়ে সুলতান মনসুরকে পরাজিত করে চমক দেখিয়েছিলেন এম এম শাহীন।

এমএম শাহীন বলেন,’কুলাউড়ার উন্নয়ন তথা জনগণের মঙ্গলার্থে আমি রাজনীতি করি। আসন্ন নির্বাচনে যদি শত প্রার্থীও আসেন,এতে আমার কোন ভয় বা দুশ্চিন্তা নেই। কুলাউড়াবাসী আমাকে ভালো করে চিনে ও তারা আমাকে পুনরায় এমপি হিসেবে দেখতে চায়। কোন প্রতীকে নির্বাচন করলাম ও করবো, সেটা বড় কথা নয়। ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে ‘এক ভোটে দুই এমপি বলে’ এরা (সুলতান- আব্বাছ) জোট বেঁধে কুলাউড়াকে পশ্চাৎমুখী (উন্নয়ন বঞ্চিত) করেছেন। কুলাউড়ার মানুষকে এই সরকারের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করেছেন। এমপিও কোনো উন্নয়ন করেননি,যা প্রতীয়মান হচ্ছে’।

উল্লেখ্য যে,আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তিনি ৭৯ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে সাবেক এমপি এমএম শাহীনকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ছিলেন এ আসনে নৌকার কাণ্ডারী। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে তিনি কুলাউড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেন। কিন্তু ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ২০১০ সাল থেকে রাজনীতিতে ছিলেন একেবারেই নিষ্ক্রিয়। নির্বাচনের সময় ঐক্যফ্রন্টের মূলসারির নেতা হিসেবে তার আবির্ভাব এবং ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে বাজিমাত করেন।

তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম লোকমুখে শুনা যাচ্ছে এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই তালিকায় যাদের নাম লোকমুখে বেশি আলোচিত হচ্ছে,তারা হলেন;-
(১) প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু।
(২) কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল।
(৩) ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান শামীম।
(৪) সাবেক সচিব আব্দুর রউফ ও সাবেক সচিব মিকাইল সিপার।
(৫) বিএমএর সাবেক সভাপতি ডা. রোকন আহমেদ।
(৬) অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সাদরুল আহমেদ খান।
(৭) কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল মতিন।
(৮) বর্তমান সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু।
(৯) কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একেএম সফি আহমদ সলমান।
(১০) উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাংবাদিক কামাল হাসান।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *