গোপালগঞ্জে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে প্রতিপক্ষের লোকজন নানাভাবে হুমকি-ধামকি এবং হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছে ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর পরিবার। সালিশের নাম করে ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা!!
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম পশ্চিমপাড়া নিবাসী জুয়েল শেখ এর স্কুল পড়ুয়া নয় বছরের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী একই এলাকার মুসলিম মুন্সির ছেলে শাহজাহান মুন্সী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার দিন দিবাগত রাত ৮ টায় গোপালগঞ্জ থানা পুলিশ শাহজাহান মুন্সি কে আটক করে জেল কারাগারে পাঠিয়েছে।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা নং ০৮, তারিখ: ০৮/০১/২০২২।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলা সিংগাইর থানার বাসিন্দা মোহাম্মদ জুয়েল কাজের সুবিধার্থে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম পশ্চিমপাড়া শাজাহান মুন্সীর পুরাতন বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
ধর্ষক শাহজাহান মুন্সী স্ত্রীর কাছে ওই স্কুল ছাত্রী নিয়মিত আরবি পড়তে যেতেন। প্রতিদিন আরবি পড়া পড়তে আসা যাওয়া করায় তাদের পরিবারের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন বিকাল চারটার দিকে শাহজাহান মুন্সী উক্ত স্কুলছাত্রীকে রেকেট (ব্যাডমিন্টন) খেলার কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। ওই সময় বাড়িতে কেউ না থাকায় নয় বছরের নাবালিকা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে শাহজাহান মুন্সী।
ধর্ষিতা ছাত্রী অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পৌঁছে তার মাকে সব ঘটনা জানায়। কিন্তু শাহজাহান মুন্সী গং প্রভাবশালী হবার কারণে ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর থেকেই ধর্ষিতার পরিবারের সদস্যদের উপর বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি প্রদান করে আসছে শাহজাহান মুন্সি গং। বিষয়টি নিরবে আপোষ করার জন্য স্থানীয়ভাবে মেয়ের পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীকে নিরাপত্তাজনিত কারণে তার দাদার বাড়ি গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সঠিক বিচারের আশায় মেয়ের বাবা মামলা তুলে নিতে রাজি হননি।
কোনভাবেই মেয়ের পরিবারকে রাজি করাতে না পেরে আসামি শাহজাহান মুন্সী মেয়ের বাবা জুয়েল শেখের বিরুদ্ধে ১০০ টাকা মূল্যের ফাঁকা স্টাম্প দিয়ে ১০ লক্ষ টাকা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফাঁকা ব্যাংকের চেক দিয়ে ১০ লক্ষ টাকার ধার নেওয়ার মামলা করেন।
এ ব্যাপারে জুয়েল শেখ বলেন, আমার প্রয়োজনে ৫০ হাজার টাকা অনেক আগে শাজাহান মুন্সির কাছ থেকে ধার নেই। সেই সময় সে আমার কাছ থেকে গ্যারান্টি হিসাবে আমার স্ত্রীর একটি ফাঁকা ব্যাংকের চেক ও আমার একশত টাকার স্টাম্প গচ্ছিত রাখি। সেই চেক ও স্টাম্প ব্যবহার করে আমার ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০ লক্ষ টাকার মামলা দিয়েছে যাতে আমি তার বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলা তুলে নেই।
এরপরও আমি মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে এলাকার প্রভাবশালী লোকজন দিয়ে বারবার আমাকে আপস করার জন্য বসতে বলে।
জুয়েল শেখ আরও জানান, সর্বশেষ গত রবিবার ২০ ফেব্রুয়ারি আসামি গং তথাকথিত শালিসের নামে তাদের করা চেকের মামলা তুলে নিবে সাথে দেড় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে স্বীকৃতি জানান। এবং ২০ লক্ষ টাকার মামলা তুলে নেয়ার আশ্বাস প্রদান করে। তার কথা না শোনার কারণে তার আপন ভাই শাহাদাৎ মুন্সি ও ইবাদত মুন্সি আমাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। ধর্ষক শাজাহান মুন্সি যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকায় তিনি বিভিন্ন ভাবে আমাদের হয়রানি করে আসছে।
মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আহাদুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, শাহজাহান মুন্সী ওই স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। এ ব্যাপারে তিনি বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর শাজাহান মুন্সি কে জেলহাজতে রাখার জন্য প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রতিবেদনে তিনি বলেন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামি শাহজাহান মুন্সীকে জেল হাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হয়ে মামলা তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাবে।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো:, মনিরুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, উক্ত ধর্ষণের মামলা তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অভিযুক্ত শাহজাহান মুন্সি জেল কারাগারে রয়েছে। ধর্ষিতা স্কুলছাত্রীর পরনে থাকা স্কার্ট বিজ্ঞ আদালতের আদেশক্রমে চিফ ডিএনএ এনালিস্ট, ফরেনসিক, ডিএনএ ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি নতুন ভবন মালিবাগ ঢাকা আলামত সমূহ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। একইসাথে আসামি শাজাহান মুন্সির শরীরের রক্ত সংগ্রহ করে ডিএনএ সংগ্রহের জন্য রক্ত প্রোফাইলিং করা হয়েছে। আমরা ডিএনএ টেস্টের ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। ডিএনএ ফলাফল পজেটিভ আসলে আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
বর্তমানে ভুক্তভোগী পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রাস্তাঘাটে বের হতেও বেগ পেতে হচ্ছে। সর্বোপরি ভুক্তভোগীরা ন্যায্য বিচারের জন্য লড়ে যাচ্ছেন।