আজ ঐতিহাসিক ৩রা নভেম্বর শোকাবহ জেলহত্যা দিবস

আপনাদেরকে স্যালুট হে শহীদ জাতীয় চার নেতা তাজ উদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মন্সুর আলি!

মুক্তিযুদ্ধের মত একটা দুরূহ জনযুদ্ধ সুচারুভাবে পরিচালনা করে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে যখন আপনাদের সম্পূর্ণ মেধা, প্রজ্ঞা আর দেশপ্রেম ঢেলে দিয়েছিলেন দেশ গড়ার কাজে, ঠিক তখনই ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকদের আঘাত আপনাদেরকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল! আমরা আপনাদের চিনতে পারিনি, মূল্যায়ন করতে পারিনি কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই চিনতে পেরেছিল; তারা বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুর সাথে সাথে আপনাদেরও যদি সরিয়ে দেয়া না যায়, তবে তাদের সোনার বাঙ্গলাকে শ্মশান বানানোর পরিকল্পনা সফল হবেনা। তাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাত্রিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পরে জাতির জনকের আজীবন রাজনৈতিক সহচর জাতীয় চার নেতা এই দিনে জেলখানার অভ্যন্তরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়!

জাতির পিতাকে হত্যা করার পর খুনি মোশতাক ও পাকিস্তান সহ আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল এদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এবং এদেশ যাতে কোনদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেই কারণে খুনি চক্র জাতীয় চারনেতাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান জেলখানার অভ্যন্তর কাপুরুষের মতো হত্যা করে জাতি ও রাষ্ট্রকে মেধা শূন্য করে ফেলে! মানবতাবোধের চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুর সাক্ষী হচ্ছে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। দেশের আপামর জনতা যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এদেশেকে স্বাধীন করেছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব নগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এদেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঠিয়ে ছিলো সেই চার নেতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বরে হত্যা করার ইতিহাস রচনা করা হয়!

বাংলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে আজীবন স্মরণ করবে। সেই থেকে ৩ নভেম্বর দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি কলংকময় দিন। সেই ষড়যন্ত্রের খেলা আজও খেলছে পুরানো আর নতুন শকুনেরা মিলে! তাই ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার পরিজন সহ জাতীয় চারনেতার আত্মদান আমাদেরকে দেশপ্রেম, জাতীয়তা বোধ, দল নয় রাষ্ট্র আগে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ৭১ এর মতো সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে ; সকল ভেদাভেদ ভুলে নতুন করে প্রেরনা যোগাবে শোকাবহ এই দিনে সবার প্রতি এই আহবান ও প্রত্যাশাই করি।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

আমিনুর রহমান শামীম। (সহকারী অধ্যাপক, লেখক ও কলামিস্ট)

বরিশাল মহানগর, বরিশাল।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *