শান্তি লতা ঘোষ। অশান্তি, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর হতাশায় মৃত্যুর ফরিয়াদ করা সেই অশিতীপর মহিয়সী নারী। অভয়নগর উপজেলায় শিক্ষার আলো ছড়াতে নিজের স্বর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে যিনি নিঃস্ব হয়ে ঘুরেছিলেন দ্বারে দ্বারে। পদে পদে হয়েছিলেন লাঞ্ছিত, অপমানিত। দিনের পর দিন গঞ্জনা সয়ে সয়ে যিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। যার চোখে ছিলো দুরাসার তিমির, অস্ফুট কান্নার জল। যার অবদানের কথা যুগ যুগ ধরে আড়াল করে রাখা হয়েছিলো। নির্যাতন, নিষ্পেষনে ক্ষত-বিক্ষত যে শান্তিলতা প্রথম উঠে এসেছিলেন ২০১৪ সালে স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক নওয়াপাড়ার নির্বাহী সম্পাদক হারুন-অর-রশীদের কলমে। সেদিন দৈনিক নওয়াপাড়ায় যিনি শিরোণাম হয়েছিলেন ‘শান্তি লতা তোমায় স্যালুট’। সেই শুরু। তারপর শান্তিলতাকে জানতে শুরু করলো মানুষ।
যা এলাকার গন্ডি ছেড়ে জেলা, জেলা থেকে বিভাগ এমনকি গোটা রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়লো। শান্তি লতাকে সংবর্ধিত করলো অভয়নগরের রেঁনেসা নামক সামাজিক সংগঠন। একে একে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকরা ছুটলেন শান্তিলতার খোঁজে। তুলে আনলেন আড়ালে থাকা সত্যকে। সরকারি কর্মকর্তারা বারবার ছুটে গেছেন শান্তিলতার হারোনা সম্মান ফেরাতে। তার বঞ্চনার অবসান ঘটাতে। ছুটে গেছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা, জনপ্রতিনিধিরাও ছুটেছেন তার নূয়ে পড়া কুটিরে। সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর হাত থেকে পেয়েছেন সংবর্ধনা সনদ। জড়িয়ে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। শিক্ষার আলো বিস্তারে শান্তিলতার অবদান তখন সর্বজন সমাদৃত।
অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের এই মহিয়ষী নারী নিজের জমি দান করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাগুরা বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার শান্তিলতার সম্মানে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষিত সেই জমির উপর নির্মিতব্য একটি চারতলা স্কুলভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে শান্তিলতার হাতেই। এদিন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি প্রেমবাগ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের আমন্ত্রণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধন করেন শান্তি লতা ঘোষ। এ সময় হারানো সম্মান ফিরে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন শান্তি লতা ঘোষ। নিজের অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ম-ল, পরিচালনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী।