করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর পরিস্থিতি সামলে নিলেও হুট করে লকডাউনের মতো পদক্ষেপে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো অপরিহার্য বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংক্রমণের বিস্তার ঘটাতে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ লম্বা সময় পর্যস্ত জারি রাখাটাই ভালো। তা না হলে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সাম্প্রতিক মেশিন লার্নিং মডেলে এ মতামত দেওয়া হয়েছে।
জনসমক্ষে যে সব তথ্য উপাত্ত রয়েছে তার ভিত্তিতে এমআইটির গবেষকেরা ওই বিশ্লেষণ চালিয়েছেন। জানুয়ারির শেষ দিক থেকে মার্চের শুরু পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা এটি নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা কিছুদিন পর কোয়ারান্টিন শিথিল করলেই চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
এমআইটির মডেলটি দেখিয়েছে ডেটা বিশ্লেষণ অনুযায়ী আগামী সপ্তাহ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। খবরটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে, লকডাউনে ছাড় দেওয়ার সময় এসে গেছে।
শিথিল লকডাউনের ফলে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয় তার উদাহরণ দিতে গিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গ টেনেছেন মডেলটি উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত এমআইটির কারিগরি প্রকৌশলের অধ্যাপক জর্জ বার্বাসটাথিসিস। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ধাক্কাটা এল আগেভাগেই লকডাউন শিথিলের কারণে। খুব দ্রুত লকডাউন শিথিল করে দিলে এর ফলাফল এতটাই ভয়াবহ হবে যে, তা কিন্তু আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত করবে।
সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম আক্রান্ত হন ৩৯ বছরের এক বাংলাদেশি। মোস্তফা সেন্টার নামে সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় বিপণি কেন্দ্রে যাওয়ার পর ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ তার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ডরমিটরিতে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে দাবানলের মতো ছড়াতে থাকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
সিঙ্গাপুরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয় জানুয়ারির ২৩ তারিখ। ওই দিন উহান ঘুরে আসা এক পর্যটকের দেহে রোগটি ধরা পড়ে। ২৩ জানুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৩৯০ জনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হলেও একজনও ওই সময়ে মারা যাননি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সিঙ্গাপুরের ওই সাফল্যের প্রশংসা করেছে। শুরুর দিকে সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালোভাবে সামাল দিলেও এপ্রিলের ৭ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলে গেছেন। রেস্তোরাঁয় ভিড় জমিয়েছেন লোকজন। সবাই যে যার মতো কাজে গেছেন। এমনকি এ মুহূর্তে দ্বিতীয় দফা সার্কিট ব্রেকার নামে পরিচিত লকডাউন চললেও গণ পরিবহন চলছে। মুদি দোকানে যাচ্ছেন লোকজন, মাস্ক পড়ে পার্কে লোকজনের সকাল-বিকেল যাওয়াও থেমে নেই।
যদিও মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত সোমবার থেকে টানা তিন দিন এক হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। আজ বুধবার পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ১০ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র: বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, দা স্ট্রেট টাইমস ও মেডআর ১৪।