মোঃ রাবু সরকার, স্টাফ রিপোর্টারঃ ঠাকুরগাঁও জেলার সসদর উপজেলার ৭ নং ঠাকুরগাঁও রোড আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রাতের অন্ধকারে টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে কতিপয় কিছু ব্যক্তি । সেই মাঠ ১০ জুলাই শুক্রবার সকালে দিনের আলোয় দখল মুক্ত করে উক্ত বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। ১০ জুলাই শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা টিনের বেরা খুলছেন এবং মাঠ থেকে তা অপসারন করছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কোন প্রকার টিনের বেড়া আমরা থাকতে দেবোনা। আমাদের খেলার মাঠ দখল করলে আমরা খেলবো কিভাবে? জানা যায়, উক্ত বিদ্যালয়টি ১৯৮৭ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ২০১৩ সালে সেটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ঐ বিদ্যালয়ের মোট জমিরি পরিমাণ ৩৩ শতক।
তার মধ্যে ১৫ শতক জমির উপর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আজিজার রহমান গামা, মো: মোস্তাফিজুর রহমান লিংকন ও মোস্তাক আহম্মেদ নিশাত নামে কতিপয় কিছু ব্যক্তি বিদ্যালয়ের মাঠে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেড়াও করে রাখেন এবং পৈত্রিক ও ক্রয় সূত্রে তারা সেই জমির মালিকানা দাবি করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। পরদিন ১০ জুলাই শুক্রবার সকালে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন দৃশ্য নজরে আসলে তাদের কোমল হৃদয়ে নাড়া দেয়। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে খবর দেন তারা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ম্যানিজিং কমিটির উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের মাঠে দেওয়া টিনের ঘেরা অপসারন করে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জমির মালিকানা দাবি করা মোস্তাফিজুর রহমান লিংকন বলেন, আমি আমার জমিতে স্থাপনা করেছি। তারা জোর পূর্বক সেসব অপসারন করিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও আমি সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়েছিলাম এবং গাছ রোপন করেছিলাম সেগুলোও অপসারন করা হয়েছে।
আমার কাছে কাগজ ও প্রমাণ রয়েছে জমির মালিক আমি। স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহল বলছেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ রাতের অন্ধকারে টিনের বেড়া দিয়ে দখল করাটা কোন ভদ্র লোকের কাজ হতে পারে না। কেউ যদি সত্যিকার অর্থে মালিক হয়ে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এর সমাধান করাটা উত্তম হবে। কিন্তু তা না করে এমন অসাধু উপায়ে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করাটা শুধু অন্যায় বা আইন পরিপন্থি নয় বরং এটি সামাজিক অবক্ষয় ও অনৈতিক কাজ। যা কিছুতেই সচেতন মহলে গ্রহণযোগ্য নয়। ৭ নং ঠাকুরগাঁও রোড আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা: শিউলি আক্তার বলেন, আমি সকালে খবর পেয়ে এসে দেখি বিদ্যালয়ের মাঠে টিনের বেরা দিয়ে দখল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার সাথে আগে কখনো যোগাযোগ কেউ করেনি আর আমি জানতামনা। আমি শুধু জানি আমার বিদ্যালয়ের মোট জমির পরিমাণ ৩৩ শতক।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মাহামুদ হাসান রাজু বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে আকস্মিকভাবে রাতের অন্ধকারে আজিজার রহমান গামা নামে জৈনক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করার চেষ্টা করা হয়। এ চিত্রের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। কোন সূত্রে তিনি বিদ্যালয়ের জমি দখল করছেন এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, শুধু মাত্র মৌখিক ভাবে তিনি দাবি করছেন পৈত্রিক সূত্রে তিনি এ জমির মালিক। আজও পর্যন্ত তার কাছে কাগজ আছে কিনা বা কাগজের সত্যতা আছে কিনা তিনি তার প্রমান দিতে পারেননি। সে কাগজ আমাদের দেখাননি। এমন ঘটনার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সকলের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবো যে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। স্থানীয় ১২ নং ওয়ার্ড পৌর কাউন্সিলর একরামুদ্দৌলা সাহেব বলেন, একটি সরকারি বিদ্যালয়ের মাঠে রাতের অন্ধকারে দখল করাটা অন্যায়। এখানে রাতের অন্ধকারে টিনের বেড়া দিয়ে তাতে কিছু উশৃঙ্খল মহিলাকে রাখা হয়েছিলো এবং এলাকায় উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তানভিরুল ইসলাম বলেন, স্কুলের জমি দখল করার ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে যায় এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি ।