টুঙ্গিপাড়া প্রতিনিধিঃ আজ ২৯ জুন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মিলনায়তন কক্ষে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতা শীর্ষক প্রচার ও প্রেসব্রিফিং ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ও দালাল চক্র থেকে প্রবাসীদের রক্ষা করা। শতকরা বেশিরভাগ প্রবাসীর অসফলতার পিছনে রয়েছে একমাত্র দক্ষতা বা সঠিক অভিজ্ঞতার অভাব। যার থেকে কিভাবে মানুষকে বাচানো যায় সে বিষয়ে সেমিনারে বক্তব্যে রাখেন বক্তারা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার গুরুত্ব ও পরামর্শ এবং চলমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোনা পেশ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সোলায়মান বিশ্বাস, পৌরসভা মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাকিব হাসান তরফদার, উপজেলা পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান অসিম কুমার বিশ্বাস,উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জোনাকি আক্তার, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফোরকান বিশ্বাস, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৫ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহ সরকারি বেসরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে দক্ষ জনশক্তি গড়েন্ন বিষয় তুলে ধরেন। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের ‘স্বপ্ন’ থাকা জরুরি। নিজের সুন্দর জীবন গড়ার পাশাপাশি স্বপ্নে ভর করে পরিবার, সমাজ, দেশ এমনকি গোটা পৃথিবী বদলে দেয়া যায়। স্বপ্ন ছুঁতে কেউ পাড়ি জমান বিদেশে। এজন্য অনেকে অসাধুদের খপ্পরে পড়ে বিপদজনক পথে পা বাড়ান। মানুষের সরল স্বপ্নকে পুঁজি করেই নিজেদের স্বার্থে অন্ধ হয়ে ওঠে দালাল ও পাচারকারীরা। স্বপ্ন পূরণের প্রলোভন দেখিয়ে হত্যাকাঘঘঙরীর মতো মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। যার একমাত্র কারণ হচ্ছে দক্ষতা বা শিক্ষার অভাব। আর যদিও পৌঁছায় কাঙ্ক্ষিত দেশে কিন্তু যথাযথ দক্ষতার অভবে ভালো ফল করতে পারে না। অবশেষে নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরে আসতে হয় আবার জীবন বিপন্ন হয় অনেকেরই। ফেসবুক ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধতা দেয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্র যেন বেড়েই চলেছে বিশ্ব ব্যপি।
সেই সঙ্গে বৈধ হতে গিয়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা কাগজপত্রহীন অবৈধ বাংলাদেশিরা। সঠিক দক্ষতা ও শিক্ষার অভাবে দালালদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। ফেসবুকে বিভিন্ন ধরণের ভুয়া ভিসার চটকধারী বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে লোভনীয় বৈধকরণের অফার দিয়ে ব্ল্যাক মেইল করছে প্রতারক চক্র। সেই সাথে নারী প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব প্রবাসীর সংখ্যাও বাড়ছে। অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না চক্রটির প্রতারণার কৌশল। তাদের যা বলা হচ্ছে, অন্ধের মতো তাই বিশ্বাস করছেন। ফলে এর সুযোগ নিচ্ছে ওঁৎ পেতে থাকা ভিসার দালাল চক্র। পাসপোর্টসহ টাকা-পয়সা দিয়েও এখনো ভিসা না মেলায় গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। চক্রের ফাঁদে পড়া এক প্রবাসী বলেন, ‘দেশ থেকে আসার সময় অনেক দেনা করে এসেছিলাম। এখন দালালরা টাকা ও ভিসা দিচ্ছে না। বিদেশে প্রবাসীদের এসব কর্মকাণ্ডে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেন জানান এক কমিউনিটি নেতা। মালয়েশিয়া কমিউনিটি নেতা রাশেদ বাদল বলেন, ‘প্রতারকের শিকার হয়ে অনেক প্রবাসী ছেলেরা খারাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে এরকম কতো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। দ্য ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন অফ মাইগ্রেশন-আইওএম এর ‘মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট ২০১৯’ এর হিসাবে, পয়লা জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২২ অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসনের সময় ৩৩ হাজার ৬শ’ ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইওএম স্পষ্ট করেই বলছে, এটি বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খণ্ডিত চিত্র। মৃত ও নিখোঁজের আসল তথ্য অজানা। জীবিকার তাগিদে গৃহ পরিজন ছেড়ে আসা এসব সরলমনা প্রবাসীদের সারা জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ হারিয়ে নিঃস্ব এখন অনেকেই। ভুক্তভোগী এসব প্রবাসীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকার মত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।