এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলায়। তিন দিন বয়সে হারিয়ে যাওয়া একটি মেয়ে দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে খু্ঁজে বের করেছে তার জন্মদাতা পিতাকে। জানা যায়, কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেংঙ্গা গ্রামের ভগীরথ মধু ১৯৭২ সালে পাশ্ববর্তী কোনের ভিটা গ্রামের পরিস্কার বাড়ৈর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং ১৯৭৩ সালে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে ভগীরথের স্ত্রী মৃত্যুবরণ করে। তিন দিন বয়সী ওই কন্যাশিশুকে কিভাবে বাঁচাবে এই নিয়ে ভগীরথ এর পরিবারের সদস্যরা চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে তারা প্বার্শবর্তী গ্রামের সতীশ বাড়ৈর স্ত্রী স্নেহলতা বাড়ৈর সহযোগীতায় বেতকাছিয়া গ্রামের লিও মধু ও কামিনী মধু মেয়েটিকে দত্তক নেয়। এদিকে লিও মধু ওই কন্যাসন্তান কে যশোরের পলেন সরকার নামে তার এক নিঃস্বন্তান আত্বীয়েরর কাছে দিয়ে দেয়। প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক পলেন সরকার ও তার স্ত্রী এঞ্জেলা সরকারের কছেই বড় হতে থাকে মেয়েটি । বেদনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুটির নামও রাখা হয় বেদনা সরকার । বেদনার শৈশবকাল যশোরেই কেটেছে পরবর্তীতে পলেন সরকার সপরিবারে ঢাকার মহাখালীতে বসবাস করেন। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বেদনা সরকার ১৯৮৮ সালে বরিশালের স্বপন মালাকারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । এই দম্পতির সংসারে লিপিকা মালাকার ও লিখন মালাকার নামে দুই সন্তান রয়েছে। এদিকে বেদনার বিবাহের ৩০ বছর পরে সে জানতে পারে পলেন সরকার তার আসল পিতা নয়, ছোট অবস্থায় তাকে দত্তক নিয়েছিল । এই কথা শোনার পরে বেদনার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে, পলেন সরকার যদি পালিত পিতা হয় তাহলে তার জন্মদাতা পিতা কে? বেদনা সরকার তার পালক মাতার ভাইয়ের কাছ থেকে যানতে পারে যে তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এরপর থেকেই বেদনা পিতৃ পরিচয় খুজঁতে শুরু করে। প্রথমে সে নারিকেল বাড়ী মিশনে এসে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারে তাকে দত্তক নেয়া লিও মধুর বাড়ি বেতকাছিয়া গ্রামে। তখন স্থানীয় প্রানজুড়ান বাড়ৈ এর সন্তান মনোহর এন্ড স্বরজিনী ট্রাষ্টের পরিচালক পাষ্টর মিখায়েল বাড়ৈর সহযোগীতায় লিও মধুর বাড়িতে পৌছান। ওখানে গিয়ে মিখায়েল বাড়ৈর মাধ্যমে তার জন্মদাতা পিতা ভগীরথ মধুর সন্ধান পায়। সর্বশেষ বেদনা সরকার লাটেংঙ্গা গ্রামে গিয়ে দীর্ঘ ৪৮ বছর পর জন্মদাতা পিতাকে চোখের সামনে দেখতে পায়। পরিচয় পাওয়ায় বাবা মেয়ে দুজনেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। বেদনা সরকার বলেন , আমার পালিত বাবা মা পলেন সরকার ও এঞ্জেলা সরকার আমাকে তাদের নিজেদের মেয়ের মতোই আদর যত্নে বড় করেছেন। তারা কোনদিনও আমাকে বুঝতে দেয়নি আমি তাদের পালিত মেয়ে তবুও যখন দীর্ঘকাল পরে আমার আপন পরিবার পেয়েছি এখন সবাইকে নিয়েই আমি সুখে থাকতে চাই। আমি ধন্যবাদ দেই পাষ্টর মিখায়েল বাড়ৈ দাদা কে,তার কারনে আমি আমার পিতৃ পরিচয় খুজে পেয়েছি,ধন্যবাদ দেই বেঞ্জামিন বিশ্সাস,মাধব বাড়ৈ,জন গোপাল হালদার, সবাই আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন । এদিকে এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে । প্বার্শবর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন বেদনা সরকার ও তার পরিবারকে দেখতে আসে উৎসাহী জনতা ।