ব্যস্ততম এ পৃথিবীতে হারিয়ে যায় সময়
ব্যস্ততম এ পৃথিবীতে হারিয়ে যায় সময়, রয়ে যায় হাজারো স্মৃতি আর আসবে না সেই সময়, যে সময় বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। আর আসবে না সেই সময় যখন মা সকাল বেলা সাজিয়ে কপালে চুমু একে ঈদের জামাতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে দিত। ব্যস্ততম এ পৃথিবীতে হারিয়ে যায় সময়, রয়ে যায় হাজারো স্মৃতি। এটি নশ্বর এ ব্যস্ততম পৃথিবীর চিরন্তন বাস্তবতা। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে আঙুল দিয়ে গুনে গুনে হিসেব করতাম, আর ছয়দিন পর ঈদ। ঈদের একটা আমেজ ছিল। মাটির ব্যাংক ভেঙে খুচরো পয়সা হিসেব করে দেখতাম, কত টাকা হয়েছে…. বাজারে গিয়ে সেই টাকা দিয়ে পছন্দের একটা সানগ্লাস কিনতাম, এটা আমার একটা শখ ছিল। বাবা নতুন কাপড় কিনে না দিলে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে কান্না করতাম, অদ্ভুত সব ছেলেমানুষি বায়না করতাম, মেয়েদের মতো মায়া কান্না কাদতাম, নতুন জামা কিনে কাউকে দেখাতাম না, দেখালে জামা পুরাতন হয়ে যাবে। ঈদের আগে কত কিছু ভেবে রাখতাম, কার কার বাসায় যাবো? কে কত টাকা সেলামি দিবে? কোথায় ঘুরতে যাবো? সিনেমা দেখতে যাবো বন্ধু মহলের সাথে ইত্যাদি। ঈদের দিন ফজর আযানের পর সবাইকে ডেকে ঘুম থেকে তুলতাম, একসাথে পুকুরে বা নদীতে গোসল করতে যেতাম , শীতে কাঁপতে কাঁপতে নাক ধরে ডুব দিতাম। বাসায় এসে সরিষার তেল গাঁয়ে মাখতাম, মা বাঁকা করে সিঁথি করে দিত, কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিত, নাস্তা করে ঈদগাঁহ মাঠে যেতাম। বাবা দশ টাকার দুইটা নোট পকেটে দিয়ে দিত। বিশ টাকা আমার পকেটে, আমাকে আর ধরে রাখে কে, নিজেকে সম্রাট মনে করতাম। সারাদিন ঘুরে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই, চকলেট, আইসক্রিম, লাঠি লজেন্স কিনে খেতাম। একটা পিস্তল কিনে কোমড়ে রেখে মাস্তানের মতো বুক উঁচু করে, শার্টের বোতাম খুলে হাঁটতাম। আজ থেকে সাত আট বছর আগেও ঈদের আলাদা একটা আমেজ ছিল। এলাকায় আত্মীয়স্বজনের আসার একটা উৎসব ছিল, ঈদে সবাই এক হইতাম, ঈদ’ই এক মাত্র মাধ্যম সবাই একসাথে হওয়া,খোশগল্প, মারামারি, হাসাহাসি ইত্যাদি। দুই দিন পর ঈদ। ঈদ মানে যে আনন্দ, সেই আনন্দ এখন আর নেই, ঈদের আমেজ নেই, ঈদের দিন কি করব? কোথায় যাবো? সকালে কি পরবো? বিকালে কি পরবো? কোন মাথা ব্যাথা নেই। আগের মতো ঈদের কোন কিছুই নেই। ঈদের আনন্দ হারিয়ে গেছে। ছোট্ট বেলার সেই দৃশ্য এখন আর সচর-আচর দেখা না গেলে ও মমতার ছলে সেসব স্মৃতি ছিন্নমূলে বেড়ে উঠা প্রতিটি মানুষের মনকে আবেগান্বিত করে দেয়। ব্যস্ততম এ শহরে একটু একাকিত্বে বসলে হাজারো স্মৃতি উড়তে থাকে দু চোখের পাতায়। মনে করিয়ে দেয় শৈশব কালের স্মৃতি বিজড়িত দিন গুলোর কথা। জিবনের সবথেকে আনন্দদায়ক সেই মুহুর্ত গুলো যেন আজ অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে। আর ভাবি কেন বড় হলাম? শিশুকালে ছিলো না কোনো দুশ্চিন্তা। শুধু খেলাধুলা, হই-হুল্লোড় আর মজা। একটু পড়াশোনা করতে হয় বৈকি। কিন্তু অফিসে যেতে হতো না, সংসারের ঘানি টানতে হতো না। বড়দের মতো বড় বড় সমস্যা ও দুঃখ এসে যখন-তখন উপস্থিত হতো না। আহা, কী মজাই না ছিল শৈশব! এ নিয়ে একটা গান মনে পড়ছে, গানটা সামান্য অশ্লীল কিন্তু প্রথম দুলাইনে সেটা প্রকাশ পায়নি। তাই গানও বাঁধা হয়ে গেল, ‘শিশুকাল ছিল ভালো, যৌবন কেন আসিল।