বাগেরহাটের ফকিরহাটে সিন্ডিকেটের হাতে আটকা পড়ে মাছে জল ও বরফের জলের সাথে মিলেমিশে একাকার মাছ চাষীর ভাগ্য

বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে সিন্ডিকেটের হাতে আটকা পড়েছে মাছের নায্য দাম। মাছের জল আর বরফের জলের সাথে মিলেমিশে একাকার হচ্ছে মাছচাষীদের চোখের জল। গড়াপেটার গ্যাড়াকলে গুঁতো খেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক মাছ-ব্যাবসায়ী পাইকার।মাছ বাজারজাত করনে ব্যবহৃত ক্যারেট-ট্যাংকীর যোগান ও পরিবহন ব্যাবস্থায়ও একক এক আধিপত্যবাদের কাছে ধরাশায়ী ফকিরহাটের ফলতিতা মাছের মার্কেট।চরম নৈরাজ্যতায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিনদিন তলানীর পথ ধরে মৃত্যুর পথেই এগুচ্ছে দক্ষিণবংগের সবচেয়ে বড়ো ও ভালোর তকমা নিয়ে সাড়া জাগানো মাছের আড়ত ফলতিতা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্বেতস্বর্না রুপালী চিংড়ির খনি ও সাদা মাছের উৎপাদন স্বর্গ হিসেবে খ্যাত ফকিরহাটের ফলতিতায় অবস্থিত চিংড়ি ও সাদা মাছের আড়ত এখন জিম্মি সিন্ডিকেটের হাতে।আড়তদার-পাইকারদের সিন্ডিকেট এখানে একসূত্রে গাথা।

এখানে মাছের নায্য দাম যা-ই হোক না কেন, নির্দিষ্ট একটি দামের বাইরে মাছের দাম যেমন কোনো আড়তে নেই, তেমনি বেশী দাম বলতেও সাহস দেখায়না কোনো পাইকার। খামারিদের সর্বনাশে এখানে তৎপর রয়েছে পাইকারদের এক বিশাল সিন্ডিকেট। শক্তিশালী নেটওয়ার্কের ইশারায় ওই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করছে ফলতিতা মাছের মার্কেট। ক্যারেট ব্যাবসা, ট্যাংকী ব্যাবসা ও পরিবহনজনিত সব কিছুই যেন এখানে এক হাতে ধরা। পাইকার হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জের বোরহান উদ্দিন জানান, আমি লস্ করে হলেও ফলতিতা ছেড়ে দিয়েছি।ওখানে মাছের ব্যাবসার পরিবেশ নেই। ফলতিতা মাছ বাজারের চেয়ারম্যান মার্কেট বা পপলু মার্কেটের মালিক সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম পপলুর ইচ্ছে-খুশীতেই চলে মাছের মার্কেট।ক্যারেট,ট্যাংকী ও গাড়ীর ব্যাবসাও আছে তার।চাষীরা ঠিকমত দাম পাক বা না পাক নির্দিষ্ট দামের ভেতরেই ওখানে মাছ কেনে পাইকাররা।বাইরের কোনো পাইকার এখানে এসে দু-চারদিনের বেশী মাছ কিনতে পারেনা।

মাছ কিনে তার ট্যাংকিতে মাছ দেয়া,তার গাড়ীতে মাছ দেয়া সহ তার দেখানো আড়তেও মাছ দিতে হয় ঢাকায়। এতো সব দাদাগিরি মেনে নিয়ে আমার দ্বারা ফলতিতায় ব্যাবসা চালানো সম্ভব নয়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে, সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে মাছ কিনে হোটচ খাওয়া এক পাইকার জানালেন,আমি ওখানের চলতি দামের বাইরে মাছ কিনে ব্যাবসা করতে গিয়ে সব হারাতে বসেছিলাম। রাজনৈতিক মহল থেকে তাকে ফোন করিয়ে কোনো রকমে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বেশিদিন টিকতে পারবো বলে মনে হয়না।চট্টগ্রামে মাছ পৌছাতে সরাসরি চট্টগ্রামের গাড়ীতে মাছ পাঠানোর সুযোগ নেই। পাপলুর গাড়ীতে ঢাকা হয়েই আমাকে চট্টগ্রাম সামলাতে হচ্ছে। ফলতিতা গ্রামের সন্জয় মন্ডল জানালেন, আমি মুলঘর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম পাপলুর মালিকানাধীন চেয়ারম্যান মার্কেট বা পাপলু মার্কেটে আড়তদারি করতাম।”তুই নেতা হয়ে গেছিস,ঘর ছাড়” বলে তিনি আমায় বিনা নোটিশে তার ঘর থেকে নামিয়ে দিয়েছেন।

দাম বঞ্চনা নিয়ে ফলতিতা মাছের বাজারে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতে আসা খামারী বা ছোট বড় ঘের মালিকদের সংগে কথা বললে তারা জানান,অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে ফলতিতা পর্যন্ত মাছ এনে বিক্রির সময় আমরা যে সঠিক দাম পাইনা তা আমরা জানি।কিন্তু কথা বলিনা।বললে টিকবেও না। মাছ নিয়ে দৌড়াতে হবে ভিন্ন মার্কেটে। মন করা দাম যা-ই কম হোকনা কেনো,আমরা মাছ বেচে চলে যাই।তবে এর একটা বিহীত হওয়ারও দরকার আছে।কত খরচ, কত কষ্ট, কত ঝামেলায় মাছ বড় করা হয় তা আমরাই জানি। চিংড়ি ও সাদা মাছ কেনাবেচায় সিন্ডিকেট জনিত সার্বিক বিষয়ে যাকে ঘিরে এতো কথা সেই চেয়ারম্যান মার্কেটের মালিক সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম পাপলু বলেন, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। সবাই যার যার মত মাছ কেনে,ক্যারেট বা ট্যাংকিতে মাছ পাঠায় পরিবহনে।

আমি ভাড়ার গাড়িতে মাছ পরিবহনের ব্যাবসার সাথে জড়িত আছি ঠিকই, আমার মত অনেকেই মাছ পরিবহন করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। এদিকে সরেজমিনে ক্যামেরার সামনে সিন্ডিকেট সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সিন্ডিকেটেরই এক পাইকার সিন্ডিকেট গড়ে মাছ কেনার কথা স্বীকার করে বললেন, আমরা পাইকাররা লস্ করে বসে আছি।বহু পাইকার এই ফলতিতা মার্কেটে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত লস্ করে এখনো ব্যাবসা করে চলেছে।ব্যাবসা করেই আমাদের ওই টাকা উঠাতে হবে। মুলঘর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার জানান,বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কাছে নতি স্বীকার করে ফলতিতা মার্কেটে মাছ ব্যাবসা ছেড়ে দেয়া একাধিক ব্যাবসায়ী আমার কাছে মুঠোফোনে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন।আমি তাদের কথার সূত্র ধরে মাছের দাম নিয়ন্ত্রণ,আড়তদার-পাইকার সিন্ডিকেটের বাস্তবতা,ক্যারেট ট্যাংকি ও পরিবহনজনিত বাধ্যবাধকতার সত্যতা পেয়ে মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked as *