বরিশালের শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হলেন কিশোর চন্দ্র বালা
জাতীয় যুব দিবস ২০২৩ইং উপলক্ষে জেলা প্রশাসন বরিশাল ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বরিশাল জেলার শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠন হিসেবে শালিণ্য স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে কিশোর চন্দ্র বালাকে সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র বিতরণ করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত আলী।
জেলা প্রশাসক, বরিশাল শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ফারুক উল হক (পি.পি.এম), পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম(বি.পি.এম), বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক (বীর প্রতীক), সাবেক সাংসদ এ্যাড. তালুকদার মোঃ ইউনুস সহ শতাধিক যুব সংগঠক ও সুধীজন।
উল্লেখ্য,সাহসী এই তরুন কিশোর চন্দ্র বালা ১৯৯৬ সালে বরিশাল শহরে জন্মগ্রহন করেন, তার পিতা রতন চন্দ্র বালা, মাতা মিতা রানী বালা, তিনি শিক্ষা জীবনে উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অমৃত লাল দে কলেজ ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ) থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রথম বিভাগে স্মাকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। দূরন্ত এই কিশোর পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই প্রতিবেশি শিশুদের পড়াতে শুরু করেন এবং সাহিত্য পাঠ, সংস্কৃতি চর্চা, সহশিক্ষা মূলক কার্যক্রম অনুশীলনের মধ্য দিয়েই পার করেন বাল্যকাল। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই কাব স্কাউট দলে যোগদান করেন ২০০৩ সাল থেকে অদ্যাবধি স্কাউট আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন। পালন করেছেন বিভিন্ন পদের দায়িত্ব এর মধ্যে কাব ও স্কাউট লিডার ইন্সট্রাক্টর, রোভার স্কাউট লিডার প্রভূত। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের মনোনয়নে বরিশাল বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ রোভার হিসেবে ইনভেটিভ এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। ২৭ বছরের এই জীবনকালে বহু সাংস্কৃতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, এর মধ্যে শালিণ্য স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন নামে একটি যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন এবং সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও ব্রজমোহন কলেজে অধ্যয়নকালে সাংস্কৃতিক সংগঠন উত্তরণের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্র ইউনিয়ন কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। ধ্রুবতারা উউথ ডেভেলপমেন্ট ফাইন্ডেশন বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সভাপতি, তানসেন সংগীত বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, বরিশাল শিল্পমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক, মুকুল মিলন খেলাঘর আসরের আহবায়ক, কীর্তনখোলা মুক্ত রোভার দলের রোভার স্কাউট লিডার সহ অর্ধশতাধিত সংগঠনের সাথে রয়েছে সম্পৃক্ততা। সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও রয়েছে পদচারণা, বরিশালের ৩২টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতি সংগঠন সমন্বয় পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন তিনি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও ভ্রমন কাহিনী যা প্রকাশিত হয়েছে তারমধ্যে অন্যতম- অপরাজিত বাঙালি, ক্ষুধার দানব, মুক্তি আসবেই, জীবনানন্দের সাথে দেখা, ব্যাকবেঞ্চার, চৈত্রের অভিযাত্রী ইত্যাদি। কবিতা লিখতে ও আবৃত্তি করতে পছন্দ করেন।
আগামী বই মেলায় তার বই প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক অবক্ষয়, পরিবেশ রক্ষায় দূষণ বিরোধী, দুর্নীতি ও ধর্ষণ বিরোধীসহ সড়ক আন্দোলনের মত বড় বড় আন্দোলনে সামনের সারীতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সোচ্চার রয়েছেন। তিনি অবসরে গ্রামে ঘুরতে ও মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করেন। খুব সাদাসিধে পোশাক বলতে পাঞ্জাবী পড়তে বেশি পছন্দ করেন। তার গোঁফ ও হাসির প্রশংসা রয়েছে পরিচিত মহলে।
দীর্ঘ ১৬ বছরের সাংগঠনিক জীবনে কয়েক হাজার শিশু ও যুবকে শিখিয়েছেন নানান দক্ষতার পাঠ, পেয়েছেন “জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০১৭”। কবিতা আবৃত্তি, দলীয় সংগীত, লেখালেখির পাশাপাশি নাটকের জগতেও বিচরণ রয়েছে তার, ইতোমধ্যে নাটক লেখা ও নির্দেশনা দিয়ে মঞ্চস্থ করেছেন বেশ কয়েকটি নাটক। প্রযোজনা করেছেন পট গানের। এছাড়াও মঞ্চ নাটক ও টেলিভিশনের পর্দায়ও নাটকে অভিনয় করেছেন কিশোর। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ও কর্পোরেট জব সহ নানান এনজিওতে ট্রেনিং ফ্যাসিলেটেটর হিসেবে কাজ করছেন তিনি, কিন্তু সবকিছুর অবসরে বরিশালের শিশু ও যুবদের জন্য নিয়মিত কাজ করাই তার একমাত্র লক্ষ্য। কর্মজীবী নিরক্ষর মায়েদের জন্য তৈরি করেছেন স্যাটেলাইট স্কুল।
সেখানে সপ্তাহে একদিন তিনি নিজেই পাঠদান করেছেন। এছাড়াও বহু দরিদ্র শিক্ষার্থীর শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। চড়ের মানুষের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প নানান বিষয়ে সচেতন বার্তা, জীবন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ, ঈদ-কোরবানিতে সহযোহিতার সংস্থান করে যাচ্ছেন তিনি। শ্রমজীবী নিপীড়িত দরিদ্র মানুষের অধিকার আদায়ে ও দুঃখ কষ্টের সহমর্মী প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর কিশোর জানান তিনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতি প্রণয়নকারী পরিষদের সদস্য হতে চান এবং কৃষিকাজ ও শিক্ষকতা করে জীবিকা নির্বাহ করতে চান তিনি।