ধর্ষণ! শব্দটা আজ বহু ব্যবহৃত। শিশু হোক বা বৃদ্ধা, এই শব্দটা থেকে ছাড় মেলে না কাউরই। খবরের কাগজ থেকে ওয়েবসাইট, রোজ অন্তত একটা নৃশংস ধর্ষণের খবর যেন বাধা ধরা। গত কিছু দিন আগে ধর্ষিতা হয়ে জিবন দিতে হয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্রী হিরা মনির । এ খবর আজ এতটাই স্বাভাবিক যে আপনি হয়ত শুনে আর অবাক হন না। কিন্তু এই খবরটাতে হবেন। কারণ ধর্ষিতার থেকেও এই ঘটনার বেশি আলোচ্য ধর্ষক। মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের কথা বলে গাজীপুর থেকে পঞ্চগড়ে ডেকে নিয়ে এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বোদা থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছেন ওই তরুণী। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সায়েম মিয়া। এর আগে বুধবার (১৫ জুলাই) রাতে মামলার প্রধান দুই আসামি বোদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকী ও প্রথম বাংলা আইপি টিভির চিফ নিউজ এডিটর সাজ্জাদ হোসেন মিলনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে আদালতে নেওয়া হয়।
এ মামলার আরেক আসামি হলেন, বোদা নগরকুমারী এলাকার জসীম উদ্দিন (২২)। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণী গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় থাকেন। ইউটিউবের জন্য বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেন। পাঁচ বছর আগে ঢাকায় পরিচয় হয় পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার ঝিনুকনগর এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন মিলনের সাথে। মিলন ‘প্রথম বাংলা টিভি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চিফ নিউজ এটিডর ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে মিলন নিজ এলাকা বোদায় একটি মিউজিক ভিডিও তৈরির জন্য মডেল হিসেবে কাজ করতে ওই তরুণীকে যেতে বলেন। গত মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সকালে বোদায় পৌঁছান ওই তরুণী। মিলন তাকে নিয়ে যায় বোদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকীর বাড়িতে। সেখানেই সাজ্জাদসহ ৪-৫ জন মিলে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করেন। পরদিন বুধবার (১৫ জুলাই) তাকে বোদা পৌরসভার ভাসাইনগরে এক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানেও গণধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী। এক পর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে বোদা থানায় আশ্রয় নেন। বুধবার রাতেই বোদা থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোদা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সায়েম মিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডও আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা ও জবানবন্দি গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’ পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় অনেক বিষয় বেরিয়ে আসছে।
আমরা ধারণা করছি এই ঘটনার সাথে পুরো একটি চক্র কাজ করছে। আদালত আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমরা পুরো চক্রটিকেই ধরার জন্য কাজ করছি। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে তরুণীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমরা যখন করোনাভাইরাস মহামারীর সাথে লড়াই করছি। ঠিক সেই সময় এই শিশু ধর্ষনের ঘটনা আমাদেরকে লজ্জিত করেছে। এই লজ্জাজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজ আমাদের মা-বোনের নিরাপদ নয়। কিছু নরপিশাচ, নরপশু, লম্পট প্রতিনিয়ত ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এখনই যদি সরকার এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয় তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা বেড়েই চলবে। তাই এখনই সময় এসব নরপশুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। অনতিবিলম্বে দোষিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।